বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কিন্তু বিপদ কেটে যাওয়ার পর, এদেশের সরকার কৃষি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের এই অনবদ্য ভূমিকার কথা মনে রাখেনি। মুক্ত অর্থনীতির ভুল ব্যাখ্যা করে, ভারতকে এখনই উন্নত দেশের সারিতে দাঁড়াবার স্বপ্ন ফেরি করে। তার জন্য আবশ্যক পাঠগ্রহণের ধারেকাছে যায় না। সস্তায় বাজিমাত করতে, মনোনিবেশ করে দেশীয় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রের পাইকারি হারে বেসরকারিকরণে। বিলগ্নীকরণের জন্য যে ‘ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন’ নির্মলা সীতারামনের মন্ত্রক ছকেছে, তাতে সবার আগে রাখা হয়েছে ব্যাঙ্ক, বিমা প্রভৃতি ক্ষেত্রকে। এরপর আছে পেট্রলিয়াম, টেলি যোগাগাযোগ, অসামরিক বিমান, শিপিং, সড়ক, বিদ্যুৎসহ মোট ২০টি ক্ষেত্র। সোজা কথায়, সরকারি সম্পত্তি বেচে রাজকোষে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা যোগ করাই মোদি সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। নিন্দুকেরা বলেন, আসলে এটা একটা মস্ত দুর্নীতির পার্ট। কিছু পছন্দের ধনকুবেরের হাতে নামমাত্র দামে বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পদ তুলে দিতেই এই প্ল্যান। সরকার সেই অভিযোগ নস্যাৎ করলেও পাইকারি হারে বিলগ্নীকরণের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম। জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত ভারতজুড়ে চলেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প নির্মাণের এক মহাযজ্ঞ। ইন্দিরা উত্তর পর্বে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সম্পর্কে রাষ্ট্রের আগ্রহে ভাটা পড়লেও তা ধ্বংসাত্মক আকার নেয়নি কোনওভাবেই। মনমোহন সিং বিলগ্নীকরণের কথা বললেও তাঁর নীতির ভিতরে কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা ছিল। সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অলাভজনক সংস্থাকে লাভজনক করে তুলতে প্রয়াসী ছিল ইউপিএ সরকার। কিন্তু যেসব সংস্থাকে কোনওভাবেই সে-পথে আনা সম্ভব হয়নি, শুধুমাত্র সেগুলিকেই বেসরকারি পরিচালনায় ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিল কেন্দ্র।
অন্যদিকে, মোদি জমানায় বিলগ্নীকরণের নীতি গৃহীত হয়েছে নির্বিচারে। তার ফলে একাধিক লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাতেও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব হারিয়েছে কিংবা হারাতে বসেছে। সম্প্রতি কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা প্রমাণ করেছে—সরকারি পরিচালন ব্যবস্থাতেও সেগুলি লাভজনক হয়ে উঠতে পারে এবং পুরনো লাভজনক সংস্থা অতি দ্রুত রূপান্তরিত হতে পারে ঈর্ষণীয় লাভজনক সংস্থায়। যেমন স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবার ১৩,২৬৫ কোটি মুনাফা অর্জনের এক সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। মোটা অঙ্কের মুনাফা পেয়েছে আরও একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। লাভের মধ্যে ফিরেছে ভারত পেট্রলিয়াম সংস্থাও। সরকারি সংস্থাগুলিও ডিভিডেন্ড দিচ্ছে, চাঙ্গা হচ্ছে রাজকোষ! স্বভাবতই চোখ খুলছে মোদি সরকারেরও। তারা বুঝেছে, বেসরকারি পরিচালনাই বিশল্যকরণী নয়, সরকারের নিজের ভিতরেও রয়েছে জ্বলে ওঠার আগুন। হয়তো এজন্য হঠাৎই হাওয়া ব্রেক কষছে অর্থমন্ত্রক। ভারত পেট্রলিয়াম, কন্টেইনার কর্পোরেশন, সেন্ট্রাল ইলেকট্রনিক্স, হিন্দুস্তান কপার প্রভৃতি অর্থনীতির স্তম্ভস্বরূপ সংস্থাগুলি বিক্রয়ে লাগাম টানার কথা ভাবছে সরকার। বিলম্বে হলেও সরকারের এই সংবিৎ স্বাগত। নানা জরুরি ক্ষেত্রের উপর থেকে নির্বিচারে সরকারের একচ্ছত্র অধিকার হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা সত্যিই উদ্বেগের, আশঙ্কার। বস্তুত এই যথেচ্ছাচার রয়ে গেলে তা অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার পক্ষে অশুভ হতে পারত।