পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
তুলনায় স্পষ্ট হয়, স্বচ্ছতার প্রশ্নে ভারত বহু বহু যোজন পিছিয়ে রয়েছে। সংবিধানের নির্দেশ রয়েছে, তৈরি হয়েছে আইনও, তবু নাগরিকের কাছে রাষ্ট্রের জবাবদিহির ব্যাপারটি যেন এক সোনার পাথরবাটি! নাগরিকের প্রশ্নের জবাব দিতে সরকারি দপ্তরগুলি যতক্ষণ না বাধ্য হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অস্বচ্ছতা বা দুর্নীতির নাগপাশ থেকে মুক্তি অসম্ভব। এই জগদ্দল পাথরটাই সরাতে বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাঁর প্রশাসন চালু করেছে গ্রিভান্স সেল এবং বেশিরভাগ দপ্তরের রয়েছে পৃথক গ্রিভান্স পোর্টাল। নাগরিক পরিষেবা সংক্রান্ত যেকোনও অভিযোগ সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে এবং সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এছাড়া দুয়ারে সরকার মারফতও নেওয়া হয় নাগরিক পরিষেবা বিষয়ক অনেক অভিযোগ। সেগুলি যাচাই করার পর দ্রুত সমাধানেরও চেষ্টা নেয় প্রশাসন। এই সূত্রে পঞ্চায়েত দপ্তরের পোর্টালে জমা হওয়া কিছু অভিযোগের প্রতি নজর করা যায়: অনেকেই জানতে চান, ‘১০০ দিনের কাজের টাকা কবে পাব?’ কাজ করা সত্ত্বেও, গত অর্থবর্ষের শেষদিকের কয়েক মাসের পারিশ্রমিক শ্রমিকরা এখনও পাননি। অন্যদিকে, চলতি অর্থবর্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজই দিতে পারছে না রাজ্য। গ্রামীণ দারিদ্র্যদূরীকরণ কর্মসূচির একটি হাতিয়ার হিসেবেই ইউপিএ সরকার এনআরইজিএ চালু করেছিল। কিছু অন্যায় অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে রাজ্য সরকারের অভিযোগ। শাসক দলের সন্দেহ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে অবিজেপি রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতেই সংকীর্ণ রাজনীতি করছে মোদি সরকার। রাজ্য সরকার জবাবে (এসএমএস মারফত) বাধ্য হয়ে লিখছে: ‘কেন্দ্র টাকা ছাড়েনি। তাই টাকা দেওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের করণীয় কিছু নেই।’ আবার কেউ জানতে চান, ‘১০০ দিনের কাজ পাচ্ছি না কেন?’ রাজ্য তখন জানাচ্ছে: ‘কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না আসায় নতুন কাজ শুরু হয়নি।’
উল্লেখ করা দরকার, গ্রিভান্স পোর্টালে ভুয়ো অভিযোগ জানানো সম্ভব নয়। কারণ, নিজের পরিচয় এবং ওটিপি দিয়েই অভিযোগ জানানো যায়। গত একমাসে গৃহীত ৪৩০টি অভিযোগের বেশিরভাগই ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত। তারপরেই রয়েছে সড়ক যোজনা ও আবাস যোজনা বিষয়ক অভিযোগ। শেষোক্ত দুটি ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে সরব। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তারপরেও মোদি সরকারের আচরণ বুঝিয়ে দেয়—রাজ্যের, বিশেষ করে বাংলার বঞ্চনার প্রশ্নে দিল্লি দিল্লিতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। মোদি সরকার কী মনে করে, এই কৌশলে বাংলায় এবং অন্যকিছু অবিজেপি রাজ্যে অদূর ভবিষ্যতে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার গড়ে ফেলবে? নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়, না। এই নীতিহীনতায় বাস্তবে এটাই হবে যে—আরও বিষিয়ে যাবে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে তৈরি হবে ব্যর্থতার রেকর্ড। বাংলাসহ বিরোধী রাজ্যগুলির পর্যাপ্ত পারফর্ম্যান্স ছাড়াই কি জিডিপি বৃদ্ধির পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চান মোদি-সীতারামন!