পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
তবে এমন একজন মানুষকে এবার বাংলার রাজ্যপাল করা হয়েছে যাঁর কাজকর্ম প্রশংসা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে বলেছেন, ‘ম্যান অব আইডিয়াস’। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও তাঁকে কর্মে অনুপ্রাণিত আমলা হিসেবে অভিহিত করেছেন। যাঁর কর্মজীবন শুরু আবার এই বাংলাতেই। তাঁর নামের সঙ্গেও রয়েছে বাংলার যোগ। আছে বাংলার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক। কেরল, তামিলনাড়ুর পরম্পরা মেনে ‘নেতাজি’ সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর নামে সঙ্গে ‘বোস’ পদবিটি যুক্ত রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাই তাঁর কাছে বঙ্গবাসীর প্রত্যাশা অনেক। আশা করা যায়, তিনি সেই প্রত্যাশা পূরণ করবেন। এবার অন্তত থাকবে না কোনওরকম রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত। তবু রাজ্যের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই যেভাবে নতুন রাজ্যপালের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আগ্রহ বেড়েছে। কারণ, দিল্লির প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলের একাংশের কাছে বাংলার নতুন রাজ্যপালের পরিচয় নাকি তিনি ‘বিজেপির কাছের লোক’। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর গুড বুকে থাকা একজন পণ্ডিত, দক্ষ প্রশাসক, প্রাক্তন আমলা। সবার জন্য পাকা বাড়ির ভাবনার মতো কেন্দ্রের একাধিক জনমুখী পরিকল্পনা তাঁর হাত ধরেই। এমনকী ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পরে কেন্দ্রের সম্ভাব্য মন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল। এমন একজন ব্যক্তি বাংলার রাজভবনের বাসিন্দা হওয়ায় বঙ্গ রাজনীতিতে ফের নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর কারণ দুটি। প্রথমত, আগামী বছরের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বঙ্গরাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করছে। এই পরিস্থিতিতে রাজভবনের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এমন সময়ে দায়িত্বভার গ্রহণের পর নতুন রাজ্যপাল সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলবেন, নাকি প্রাক্তনের পথ অনুসরণ করে প্রায়শই বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে (শাসকদলের অভিযোগ) সংঘাতের পথে হাঁটবেন, তা নিয়ে কৌতূহল যথেষ্ট। তবে ধনকার উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর অবশ্য বাংলায় রাজভবন ও সরকারের সংঘাত এখন অতীত।
ইতিহাস বলছে, বাংলায় ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল ধরমবীর। ১৯৭১ সালেও সরকার গঠন নিয়ে বামেদের সঙ্গে সংঘাত বাধে তৎকালীন রাজ্যপাল ধাওয়ানের। ১৯৭২-৭৭ দেশে এবং এই বাংলায় ছিল কংগ্রেসের শাসন। তাই রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাতের কোনও অবকাশ ছিল না। পরবর্তীকালেও বারবার নানা ইস্যুতে রাইটার্স রাজভবনের সংঘাত হয়েছে। ১৯৮০তে ইন্দিরা জমানায়, রাজ্যপাল বি ডি পান্ডে বামফ্রন্টের কাছে ছিলেন ‘বাংলা দখল পান্ডে’। বাম জমানাতে সরকার ও রাজভবন বিরোধ দেখা গিয়েছে গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর আমলেও। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনার পরে তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ‘হাড় হিম করা সন্ত্রাস’ মন্তব্য করেছিলেন। এতেই সরকারের সঙ্গে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে রাজ্যপাল নারায়ণন ও কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দু-একটি বিক্ষিপ্ত ইস্যুতে ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া বড় কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। তবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের কার্যকালে রাজভবন থেকে রাজনীতি করার অভিযোগ শাসকদল তৃণমূল তুলেছে বারবার। তাঁকে কেন্দ্র করে নবান্ন রাজভবনের বাগ্যুদ্ধ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সেই টানাপোড়েনের ইতি ঘটে অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে লা গণেশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর। বরং বলা যায়, এসময়ে নবান্ন-রাজভবন সুসম্পর্কই গড়ে উঠেছিল। বাংলার মানুষও চায় সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে কোনও বিরোধ নয়, সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক। তবেই বাংলার উন্নয়নের পথ মসৃণ হবে। অভিভাবক হিসেবে নতুন রাজ্যপালের কাছে তাই প্রত্যাশা বেশি। তিনি নিজেই অবশ্য বলেছেন, ‘বাংলার উন্নয়নে কাজ করব’। বঙ্গবাসীও তেমনটা চায়। কোনও বিশেষ দলের নয়, দেখতে চায় রাজ্যপালের নিরপেক্ষ ভূমিকা। তাঁকে স্বাগত।