রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
স্বচ্ছতার নীতি অনুসৃত হলে মেধাবীদের মধ্যে সেরাদেরই তাদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তা হয় না। বহু অভিভাবক নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্ন সন্তানের মাধ্যমে সাকার করতে চান—কোনও একটি পেশাকে ‘এক নম্বরে’ রেখে ছেলে বা মেয়েকে প্ররোচিত করেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য। বাস্তবটা হল—এদের সবার পক্ষে মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়া সম্ভব নয়—বিষয় বা পেশার প্রতি ভালোলাগা, এমনকী যথেষ্ট মেধা থাকা সত্ত্বেও। কিছু মানুষের নির্বুদ্ধিতা-অসহায়তাকেই পুঁজি করে সক্রিয় হয় অসাধু চক্র। পিছনের দরজা দিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করার ব্যবস্থা হয়। দালাল চক্রের সঙ্গে নিয়ামক সংস্থা বা সরকারি কর্তৃপক্ষের একাংশের যোগসাজশ ছাড়া এই অপরাধ সম্ভব কি? পাপাচারের বলি হয় মেধা তালিকায় জায়গা পাওয়া কিছু পড়ুয়া। এই অপরাধ কঠোর শাস্তিযোগ্য। প্রাসঙ্গিক নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্তটি ‘ব্যাপম কেলেঙ্কারি’ হিসেবে পরিচিত। মধ্যপ্রদেশের ব্যবসায়িক পরীক্ষা মণ্ডল (ব্যাপম) মোট ১৩টি প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজন করত। তার মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এমবিবিএস ভর্তির মেধা তালিকা যেমন তৈরি হতো, তেমনি হতো রাজ্য সরকারি দপ্তরগুলির চাকরিতে নিয়োগের তালিকাও। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের এই বীভৎস অপরাধের পর্দা ফাঁস হয় ২০১৩ সালে। রাজ্য পুলিসের নানা শাখা এবং সিবিআই তদন্ত থেকে শেষমেশ যা জানা যায়, তাতে সারা দেশের মাথা হেঁট হয়ে যায়। এই কেলেঙ্কারিতে—বাঘা মন্ত্রী, আমলা, শাসক এবং বিরোধী দলের নেতা—কে নেই!
সরকারি ক্ষেত্রে যেকোনও ধরনের অস্বচ্ছতা, দুর্নীতির প্রসঙ্গে উঠলে এখনও ব্যাপমের সঙ্গে তুলনা টানা হয়। কোনও রাজনৈতিক দলকে বিঁধতেও ব্যাপমের জুড়ি নেই। এই স্ক্যামের বীভৎসতা নৃশংসতার স্মৃতি এখনও টাটকা। কিন্তু রাজনীতিক, আমলা, নাগরিক প্রভৃতি কতটা সচেতন হয়েছেন? প্রশ্নটি বারবার ওঠে, রাজ্যে রাজ্যে একই নোংরামির পুনরাবৃত্তি দেখে। এই সিরিজের নবতম সংযোজন যোগীরাজ্যে নিট দুর্নীতি। ২০২১-২২ সালের নিট উত্তীর্ণ একদল পড়ুয়ার অভিযোগ, আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি ও ইউনানি কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলিতে বিস্তর অনিয়ম হয়েছে। নিট উত্তীর্ণ না-হওয়া সত্ত্বেও বহু পরীক্ষার্থীর নামে সিট বরাদ্দ হয়েছে এইসব কোর্সে পড়ার জন্য। সিট পিছু নেওয়া হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার ঘুষ। এইভাবে মেধা তালিকায় পাল্টে গিয়েছে ৯২৭ জনের নাম। এমনও কিছু নাম ঢোকানো হয়েছে, যারা কাট-অফ মার্কসই পায়নি। এমন ২২ জনের হদিশ মিলেছে যারা নিটে বসেইনি। সরকারি কলেজে ভর্তির জন্য সিট প্রতি ঘুষ নেওয়া হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। অঙ্কটা বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে অর্ধেক। টেবিলের তলা দিয়ে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এইভাবে। অভিযোগ পৌঁছেছে আয়ূষ মন্ত্রক, এমনকী রাষ্ট্রপতি ভবন অব্দি। বিপাকে পড়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। কয়েকজন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। একইসঙ্গে চলছে দায় এড়াবার প্রতিযোগিতা। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্য নানা কেলেঙ্কারির প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রমাণ করে চলেছে, ‘পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’ স্রেফ কথার কথা, বাস্তব নয়। নিট কেলেঙ্কারির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া জরুরি। নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া কেলেঙ্কারির কানেও টান পড়বে না, মাথাও আসবে না সামনে।