বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
২০২১ বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি কলকাতা-শিলিগুড়ি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। আজ তাঁর কাছেই প্রশ্ন, প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি কী হয়েছে? সামান্য শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধন ঝুলে রয়েছে উদ্বোধকের নাম নিয়ে দোলাচল না কাটায়। রেল কর্তৃপক্ষ ঠিকই করতে পারছে না—প্রধানমন্ত্রী অথবা রেলমন্ত্রীর মধ্যে কে করবেন উদ্বোধন। গত দু’বছরের মধ্যে বাংলার জন্য মোদি সরকার উল্লেখযোগ্য বা বড় কোনও প্রকল্প ঘোষণা করেনি। ২১ মার্চ, ২০২১ অমিত শাহ কলকাতায় এসে প্রকাশ করেছিলেন—‘সোনার বাংলা সঙ্কল্পপত্র ২০২১’। আসলে সেটা ছিল বিধানসভার ভোটের জন্য বিজেপির ইস্তাহার—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় মা-মাটি-মানুষের সরকার তৈরি আটকাবার মরিয়া চেষ্টা। ইস্তাহারের ছত্রে ছত্রে ছিল হাজার হাজার কোটি টাকার গল্প। সেটা পড়ে মনে হচ্ছিল, বাংলা ২২ ক্যারেটের সোনায় মুড়ে গেল বলে! ভোট মিটতেই অবশ্য সব ভোঁ-ভাঁ। উল্টোদিকে, সারা দেশ দেখছে মোদি সরকার ব্যস্ত শুধু ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলির ‘উন্নয়ন’ নিয়ে। বিপুল পরিমাণ অর্থের বরাদ্দে মোদি সরকারের অগ্রাধিকারের রাজ্যগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, কর্ণাটক ও উত্তরাখণ্ড। প্রস্তাবিত ও নির্মীয়মাণ প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর, প্রতিরক্ষা উপকরণ প্লান্ট, সর্বাধুনিক বিমানবন্দর, সফটওয়্যার শহর, টেকনোলজি হাব, সেন্টার ফর ব্রেন রিসার্চ, এইমস, মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, সার কারখানা, কোচিং টার্মিনাল, এসি রেল স্টেশন, রেলের নানা ধরনের পরিকল্পনা।
সবচেয়ে বেশি টাকার প্রকল্প পেয়েছে উত্তরপ্রদেশ (১ লক্ষ কোটি টাকা)। উত্তরাখণ্ডের মতো ক্ষুদ্র একটি রাজ্যেও চলছে ১৮ হাজার কোটি টাকার কাজ। দুর্ভাগ্য হল, এই তালিকায় ফের এক দুয়োরানির নাম পশ্চিমবঙ্গ। ডবল ইঞ্জিন সরকারের যিনি সাক্ষাৎ ‘কল্পতরু’, সেই তিনিই বাংলা-সহ বিরোধী রাজ্যগুলির জন্য বিমাতা! মোদি সরকারের এই সঙ্কীর্ণ কারবার দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, ভারত আদৌ কোনও যুক্তরাষ্ট্র তো? মনে প্রশ্ন জাগে, নরেন্দ্র মোদি কি শুধুই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী? হতে পারে ২০১৯-এর ভোটে বিজেপি (৩৭.৪ শতাংশ) এবং এনডিএর (৪৫ শতাংশ) পক্ষে যত ভোট পড়েছিল, তার থেকে বেশিই ভোট ঢুকেছিল বিরোধী দলগুলির ঝুলিতে। কিন্তু ম্যাজিক ফিগারের জোরে নরেন্দ্র মোদিই প্রধানমন্ত্রী। দেশ কোনওদিন তা অস্বীকার করেনি। তাহলে মোদি কি নিজের বিশালত্ব বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি এখনও! দুটি টার্ম শেষের পথে, আর কবে তিনি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সকলের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন?