বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
২০১১ সালে রাজ্যে অভাবনীয় ‘পরিবর্তন’ আনে মানুষ। নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, তাঁর সরকার মা-মাটি-মানুষের। গণ আন্দোলনের ভিতর থেকেই মমতার উত্থান। তাই মানুষের সমস্যার গভীর অব্দি তাঁর জানা। কিন্তু সেসব দেখেছেন বিরোধী নেত্রীর আসন থেকে। একই সমস্যা তিনি প্রশাসনিক প্রধানের চোখ দিয়েও যাচাই করে নিতে চাইলেন। আন্তরিকভাবেই জানার চেষ্টা করলেন রাজ্যবাসীর প্রকৃত চাহিদা কী কী। এরপর সরকারি কর্মী-অফিসারদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে বুঝে নিতে তৎপর হলেন, চাহিদাগুলি দ্রুত পূরণ করা সম্ভব কীভাবে। এজন্য মমতা চিরাচরিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকের থেকে অধিক গুরুত্ব দিলেন জেলা সফরের উপর। জেলায় জেলায় শুরু হল প্রশাসনিক বৈঠক। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলিতে অফিসারদের সামনে ডাক পান সাধারণ নাগরিকরাও। অগ্রাধিকার পায় আদিবাসী-সহ পিছিয়ে পড়া সমস্ত শ্রেণির নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপস্থিতি। এইসব অনুষ্ঠান মঞ্চেই উন্মোচিত হয়েছে পঞ্চায়েত, পুরসভা এবং থানা, বিডিও, খাদ্য, ভূমি-সহ নানা ধরনের সরকারি দপ্তরের কাজে গাফিলতি, অস্বচ্ছতার অনেক দিক। সম্ভবত, এসব থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আবিষ্কার করেছেন বহু সমস্যার সমাধান সূত্র। নবান্নের নির্দেশে দফায় দফায় অনুষ্ঠিত হয়েছে—দুয়ার সরকার, পাড়ায় সমাধান, দিদিকে বলো, মেয়রকে বলো, টক টু মেয়র নামে অনেকগুলি অভিনব কর্মসূচি। কর্মসূচিগুলির উদ্দেশ্য—দীর্ঘদিনের চেষ্টাতেও যেসব সমস্যার সুরাহা মেলে না সেগুলির চটজলদি সমাধান। সবচেয়ে উপকৃত হন সেই মানুষগুলি, যাঁদের পক্ষে বার বার দূরের কোনও অফিসে গিয়ে আবেদন নিবেদন করা সম্ভব হয় না।
২০৩০ সালের ভিতরে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট বা সুস্থির উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই মানবিক ঘোষণায় শামিল ভারতও। এসডিজির গোড়াতেই সকলের ক্ষুধা দূর করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বিপুল পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের পরেও বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের মুখটি নিতান্তই অনুজ্জ্বল! এই অমানবিকতার ছায়া অন্তত বাংলার মুখ থেকে সরিয়ে ফেলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তাঁর সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চালু করেছে খাদ্যসাথী। গণবণ্টন বা রেশন ব্যবস্থাই এই কর্মসূচির প্ল্যাটফর্ম। রেশন দোকান মারফত খাদ্যশস্য বণ্টনের অভিজ্ঞতা থেকে খাদ্যভবন এবং নবান্ন উপলব্ধি করেছে যে, ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচি চালু করা দরকার। এতে একইসঙ্গে মানুষের পরিশ্রম কমবে এবং বাড়বে খাদ্যশস্য বণ্টনে স্বচ্ছতা। সবচেয়ে উপকৃত হবেন শারীরিকভাবে অক্ষম বহু মানুষ। শুধু মৌখিক নির্দেশ বা প্রশাসনিক ফরমান দিয়েই প্রকল্পটি চালু করা হয়নি, গণবণ্টন আইনেও প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনেছে রাজ্য। কিন্তু একদল অনিচ্ছুক রেশন ডিলার শুরুতেই দুয়ারে রেশনের বিরোধিতা করেন। রাজ্যের কর্মসূচিতে নীতিগত আপত্তি রয়েছে মোদি সরকারেরও। নবান্নের ভূমিকা ‘অসাংবিধানিক’ দেগে দিয়ে ডিলারদের একটি অংশ সোজা আদালতের দ্বারস্থ হন। অবশেষে রাজ্যের পক্ষে স্বস্তির খবর হল, কলকাতা হাইকোর্ট পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, দুয়ারে রেশন কর্মসূচি চালু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনও ভুল করেনি। জনমুখী কর্মসূচিটি অবশ্যই সংবিধানসম্মত এবং বৈধ। আদালতের এই রায়টিকে, ক্ষমতার উচ্চাসন থেকে একেবারে মাটিতে নেমে এসে মানুষের ঘর পর্যন্ত সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্বকেই স্বীকৃতি বলতে হবে। এরপর রাজ্যের সওয়া ৯ কোটি মানুষের জন্য খাদ্যশস্য বণ্টনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে আর কোনওরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব আপত্তি থাকা উচিত নয়। ক্ষুধামুক্ত বাংলার স্বার্থে সমস্ত রেশন ডিলারকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের যথার্থ সহযোগীর ভূমিকায় দেখতে চায় রাজ্যবাসী।