কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
দিল্লিতে ১৫ জুন বৈঠক ডেকে দেশের বিরোধী নেতা-নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি, শারদ পাওয়ার, উদ্ধব থ্যাকারে, এম কে স্ট্যালিন, এইচ ডি দেবেগৌড়া, অখিলেশ যাদব, লালুপ্রসাদ যাদবের দলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এছাড়া তেজস্বী যাদব, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে কথা হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। কংগ্রেসের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৪-এর ভোটের আগে অবিজেপি দলগুলিকে এক ছাতার তলায় এনে শক্তিশালী বিরোধী মঞ্চ তৈরির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগটি ইতিবাচক দিশা দেখাচ্ছে। এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। বিরোধী মঞ্চে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে একাধিক নাম নিয়ে চর্চা চললেও সবচেয়ে আলোচিত নাম শারদ পাওয়ার। এনসিপি’র এই প্রবীণ নেতাকে রাষ্ট্রপতি পদে মেনে নিতে হয়তো আপত্তি নেই তৃণমূল, কংগ্রেস ও অন্য অনেকেরই। এখানেই মোক্ষম চাল দিতে চলেছে বিরোধী মঞ্চ। কারণ এই নামটির বিরোধিতা করতে গেলে চাপে পড়বে বিজেপি দলও। মমতার স্লোগান খুব স্পষ্ট। ‘বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও’। সন্দেহ নেই, মোদি জমানায় গত আট বছরে দেশ এক গভীর গাড্ডায় পড়েছে। অর্থনীতির পঙ্গু দশা থেকে ধর্মীয় বিভেদ তৈরির চেষ্টা—সমাজ জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেশের অবস্থা সঙ্গীন করে তুলেছে মোদি সরকার। অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সরকারকে হটানো কোনও একটি দলের পক্ষে সম্ভব নয়। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শক্তিই বিজেপি’র হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে পারে। এই সারসত্যটা উপলব্ধি করেই পুরোহিতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মাত্র এক বছর আগে বাংলার বিধানসভা ভোটে মোদি-শাহের দলকে ছয় মেরে মাঠের বাইরে ফেলে দিয়ে নজির তৈরি করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর ওই অনায়াস জয়কে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা দেশ। তাই জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব মমতা পালন করায় অনেক বিরোধী দলই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে।
সন্দেহ নেই যে, সারা দেশের বিচারে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল এখনও কংগ্রেস। যদিও মাত্র দুটি রাজ্যে পুরোপুরি ক্ষমতায় থাকা ও তিনটি রাজ্যে জোটের সরকারের থাকা কংগ্রেসের পক্ষে একা বিজেপি’র মোকাবিলা করার ক্ষমতা নেই। একদিকে কংগ্রেসের ক্ষমতা খর্ব হওয়া, অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলির প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তাকে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত প্রার্থী দিয়েই জোটের জয় যাত্রা শুরু করতে চাইছেন মমতা। আসলে জোট গঠনের জন্য কাউকে না কাউকে তো উদ্যোগ নিতেই হতো। মমতা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই বিরোধীদের একজোট করতে তৃণমূল সুপ্রিমোর উদ্যোগে ডাকা বৈঠকে সব বিরোধী দলকেই তাদের মত জানানো এবং রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম প্রস্তাব করার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীকে হারাতে হলে সব বিরোধী দলকে যে এক হতেই হবে—তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। মমতা সার্বিক আলোচনার পথ খুলে রেখেছেন। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে কারও নাম প্রস্তাব করেনি। শুধু বৈঠক ডেকেছে মাত্র। সে কারণেই তাদের তরফে বিরোধী দলের ২২ জন নেতাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মমতার এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক মহলে প্রশংসা পেয়েছে। আসলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দিয়েই জোটের জয়যাত্রা শুরু করতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৪-এর ভোটের আগে এ যেন অনেকটা স্টেজ রিহার্সালের মতো। বেগতিক বুঝে বিজেপিও মাঠে নেমেছে। ভোটাভুটি এড়াতে তারাও সর্বসম্মত প্রার্থী ঠিক করার চেষ্টা করছে। কারণ অঙ্কের হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রশ্নে এখনও পর্যন্ত এনডিএ’র চেয়ে দুই শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিরোধীরা। প্রথম রাউন্ডে বিরোধী জোট এগিয়ে থাকায় হারের ভয়ে শঙ্কিত বিজেপি। তাই হয়তো ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে’ উঠে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত প্রার্থী ঠিক করতে উদ্যোগী হতে হল তাদের। এ অনেকটা যেন ভূতের মুখে রাম নাম!