পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
সহজ প্রশ্ন এই যে, দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের এই দায়িত্ব-কর্তব্য আজকের ভারত কতখানি পালন করে? গবেষণা নিষ্প্রয়োজন। প্রায় সব ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, অনাচার আর অপরাধীদের পরাক্রমের ভিতরেই সবটা পরিষ্কার। কেন? পণ্ডিতরা এটাই উপলব্ধি করেননি কি, শাসক পক্ষ বার বার একপাক্ষিক সুবিধা গ্রহণের কৌশলকে হাতিয়ার করেছে? তাদের বরাবরের মানসিকতা এই—‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও’—আপ্তবাক্যটি শুধু আওড়াবার কিংবা পুস্তকে পাঠ করার জন্যই নির্দিষ্ট। তাতে কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, মার্কসবাদী, সমাজতন্ত্রী প্রভৃতি সকলেই এক নৌকার যাত্রী। এদেরকে দুয়ো দিয়েই আর একটি শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। গেরুয়াতন্ত্রের মধ্যমণি বিজেপি ভারতবাসীর মন ভেজাতে দাবি করেছিল, তাদের পাথেয় ‘নীতির রাজনীতি’। তাদের দ্বারা কোনও অধর্ম বা দুর্নীতি সম্ভব নয়। ভারতবাসী বার বার তাদের বিশ্বাস করেছে। তাই অটলবিহারী বাজপেয়ি থেকে নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত তিনবারের জন্য পূর্ণ মেয়াদে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন বিজেপি। ‘রামরাজ্য’ পাবে এতদূর কেউ ভাবেনি। কিন্তু মনের কোণে এই ক্ষীণ আশা জেগেছিল যে চুরি, দুর্নীতি, রাজকোষের চূড়ান্ত অপব্যবহার, ভোটের নামে প্রহসন, দেশ বিক্রি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ঘোগের বাসা বাঁধা, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, গোরু-ছাগলের মতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কেনাবেচা প্রভৃতি বন্ধ হবে।
কিন্তু বাস্তবে যা মিলল, তাতে দেশবাসীকে আরও বেশি হতাশ হতে হল। প্রথমত, এই সরকার কথার খেলাপে ইতিমধ্যেই সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। অন্যদিকে, দুর্নীতি কমার বদলে বেড়েই চলেছে। নির্বিচারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি। সরকার হয়ে উঠেছে কর্পোরেটের দালাল। গরিব, কৃষক, শ্রমিকের স্বার্থ নিত্য জলাঞ্জলি যাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই অসহনীয় হয়ে উঠেছে যে আর চুপ থাকতে পারছে না সঙ্ঘ পরিবারও। প্রতিবাদ জানিয়েছে তারাও। স্বভাবতই নরেন্দ্র মোদির জনভিত্তি দুর্বল হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত রকমারি ভোটে বিজেপি বা মোদির নেতৃত্বের ভরাডুবির সিরিজ লেখা চলেছে। এই আবহেই শনিবার ঘোষিত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। ২০২৪-এ ফাইনাল ম্যাচের আগে আরও আছে বড় দু’দফার সেমি ফাইনাল। প্রতিটি দফার ভোটই মোদিজির জন্য বিগ চ্যালেঞ্জই হয়ে উঠতে চলেছে। এইজন্যই কি ঘুরপথে ঘর গোছানোর পুরনো খেলায় নতুন করে হাত পাকাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বিজেপি? টাটকা উদাহরণ চণ্ডীগড়? জনগণ সবরকমে প্রত্যাখ্যান করার পরেও বিজেপি অত্যন্ত নিন্দনীয় উপায়ে দখল করেছে সেখানকার মেয়র পদটি? মোদির পার্টির এতটাই দৈন্যদশা আজ? এই ঘটনা পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে একটি অর্থবহ সঙ্কেত বহন করছে। অতএব সাধু সাবধান! ভারতীয় গণতন্ত্রের মর্যাদারক্ষার লড়াইটা আরও বিরাট হতে চলেছে। মোদিরা আপাতত শাসক। নিশ্চিতভাবেই দণ্ডনীতির একটি পার্শ্বব্যাখ্যাকেই তাঁরা আঁকড়ে ধরেছেন (রাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের মধ্যে সহস্র যোজনের ব্যবধানটি ভুলে গিয়ে)। শতপথ-ব্রাহ্মণ নঞর্থকভাবে দণ্ড শব্দের প্রয়োগ-সহ বলেছেন, রাজা ‘অদণ্ড্যঃ’! অর্থাৎ সাধারণের মতো আইনি শাস্তির আওতায় পড়েন না শাসক!