পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
একথা প্রায় সকলেরই জানা, গেরুয়াবাহিনীর লক্ষ্যই ছিল ভারতে হিন্দুরাষ্ট্র গঠন। সেই লক্ষ্যে মোদি জমানায় অনেক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি যে তাদের অপছন্দ তা তাদের দল ও সরকারের বিভিন্ন আচরণেই স্পষ্ট। তবু জনসমক্ষে পোস্টার দিয়ে এমন নির্লজ্জ আচরণের জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয় গেরুয়া শিবিরের নেতারা। এখন উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডা ধরে এগিয়েই ভোটে বাজিমাত করতে চাইছে যোগী আদিত্যনাথ বাহিনী। গেরুয়া পোস্টার ভীতি মানুষকে তাড়া করলেও এ ব্যাপারে যোগী প্রশাসনের নীরবতা যথেষ্টই সন্দেহজনক। এতদিন বারাণসীর প্রতিটি ঘাটে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অবাধ প্রবেশ ছিল। দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। সেখানেই ছন্দপতন ঘটাতে চেয়েছে বজরং দল। তারা দশাশ্বমেধ ঘাট, অসিঘাট, পঞ্চগঙ্গা ঘাট, মণিকর্ণিকা ঘাট সহ শহরের একাধিক ঘাটের সামনে পোস্টার মেরে হুমকি দিয়ে আদেশ করেছে, কেবলমাত্র সনাতন ধর্মের ধারকবাহক হিন্দুরাই ঘাটে যেতে পারবে। তাদের এই নষ্টামিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ। আসলে হিন্দুধর্মের উদারতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকাতেই এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পেরেছে ‘ধর্মভীরুরা’। এবারের পরিস্থিতি যা তাতে উত্তরপ্রদেশ বিজেপির হাতছাড়া হওয়া অসম্ভব নয়। হিন্দিবলয়ের এই রাজ্যে বিপুল সংখ্যায় যাদব ও মুসলিম ভোট রয়েছে। বিজেপির সেই ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই বিরোধী ভোটের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে কৃষকদের একটা অংশের ভোট। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যথেষ্ট টালমাটাল বলেই সরাসরি হিন্দু ভোটকেই পাখির চোখ করেছে যোগীবাহিনী। একদিকে বারাণসী সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মন্দির সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করে মানুষের মন পেতে চাইছে তারা। অযোধ্যায় জোরকদমে চলছে রামমন্দির গড়ার প্রস্তুতি। অন্যদিকে চলছে হিন্দুত্বের প্রচার। আসরে নেমে পড়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বজরং দল। এতদিন যা ছিল অনেকটাই আড়ালে আবডালে ভোট এগিয়ে আসতেই এখন তা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। যেমন এই পোস্টার।
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহর বারাণসী। এই শহরের সঙ্গে যে কত ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। বারাণসীর বিভিন্ন ঘাটে বছরভর লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। শুধু দেশের মানুষ নন, হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক ফি বছর বারাণসী দর্শনে আসেন। এমন এক পবিত্র অঙ্গন এবার বিভেদ সৃষ্টির পোস্টারে কালিমালিপ্ত হল। অথচ ভারতরত্ন ওস্তাদ বিসমিল্লা খান এখানেই গঙ্গায় স্নান করে নমাজ পড়েছিলেন। ঘটনা হল, এমন সংবিধান বিরোধী, সাম্প্রদায়িক ধিক্কৃত পোস্টারে ঘাট চত্বর ছেয়ে গেলেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর দলদাস পুলিসও দর্শকের ভূমিকায়। পোস্টারের মূল পাণ্ডারা অবশ্য এই ফরমানের পিছনে মন্দির ও ঘাটের পবিত্রতা নষ্টের যুক্তিটি খাড়া করেছেন। তাঁদের স্মরণ করাতেই হয় ঘাটের পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব তো যোগী প্রশাসনের। তাহলে কি প্রশাসন এক্ষেত্রেও ব্যর্থ? বারাণসীর মানুষও অবশ্য নাটের গুরুদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। অহিন্দুরাই সেখানকার পরিবেশ নষ্ট করছে এমন কোনও প্রমাণ নেই। তাই অহিন্দুদের মন্দিরে বা ঘাটে যাওয়া আটকে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। উগ্র হিন্দুত্বের পোস্টারবয়দের এ কথা স্মরণে রাখা উচিত।