গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
সারা পৃথিবী একসময় বুঝে গেল, করোনাভাইরাসের হাত থেকে এখনই মুক্তি নেই। এই অদৃশ্যপ্রায় শত্রুকে সঙ্গী করেই বাঁচার কৌশল স্থির করতে হবে। সেই কৌশলের নাম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আর সকলের জন্য টিকাকরণ। ভ্যাকসিন বা টিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ভারতই সারা পৃথিবীর ভরকেন্দ্র। নানা ধরনের টিকার উৎপাদনে হু যে দেশটির উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে তার নাম ভারত। করোনার টিকা নিয়ে গবেষণায় এবং উৎপাদনেও ভারত অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু নিজেদের কিছু ত্রুটির জন্য টিকাকরণে সেই দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হল ভারত। না-হলে সংক্রমণ এবং প্রাণহানি যে অনেক কম হতে পারত তাতে বিশেষজ্ঞদের কোনও সন্দেহ নেই। ২০২০ এবং ২০২১ টানা প্রায় দুটি বছরে করোনা সংক্রমণ আর মৃত্যুর কারণে শুধু স্বাস্থ্য কাঠামো বেসামাল হয়ে যায়নি, তার অনিবার্য বিরূপ প্রভাব পড়েছে উৎপাদন ব্যবস্থায় এবং অর্থনীতিতে। হাজার হাজার ছোট ও মাঝারি শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (এমএসএমই) বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। হারিয়ে গিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাভাবিকতা এবং ছাত্রসমাজের ঔজ্জ্বল্য। বেড়ে গিয়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা। নেমে গিয়েছে শিক্ষার মান। অদ্ভুত এক বন্দিজীবন মানুষের মনের দরজা-জানালা আরও বেশি করে রুদ্ধ করে দিয়েছে। ক্ষীণ হয়ে আসছে ছোট বড় প্রায় সকলের বাঁচার আনন্দ। সব মিলিয়ে যে ক্ষতির পাহাড় চাপল মানবসভ্যতার বুকে, করোনা অদূর ভবিষ্যতে বিদায় হলেও এই ক্ষতিপূরণ করতে হয়তো কয়েক দশক নষ্ট হবে।
এই ক্ষতির পুরোটা নিশ্চয় এড়ানো যেত না। কিন্তু ন্যূনতম হতেই পারত। তার জন্য দেশের সরকারকে আরও বাস্তববাদী এবং মানবিক হতে হতো। সবার আগে দরকার ছিল টিকাকরণে বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন। অর্থনীতিকে বিকল্প উপায়ে চাঙ্গা করার জন্য কিছু কৌশল গ্রহণ। যেমন, সমাজের একেবারে নীচের তলায় যাঁরা রয়েছেন তাঁদের জন্য কিছু নগদ জোগানের ব্যবস্থা করা এবং এমএসএমই-র জন্য সহজ কোনও আর্থিক প্যাকেজ গ্রহণ। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম এবং জিএসটি হার কম রাখা। তাহলে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো চাহিদা বাড়ত। অকাল মৃত্যুর কারণে বিপন্ন পরিবারগুলির পাশেও দাঁড়াতে হতো আর্থিক ক্ষতিপূরণের কর্মসূচি নিয়ে। কিন্তু আইনি জটিলতায় সারা দেশে এই সাহায্য কত শতাংশ পরিবার পেয়েছে তাতে সন্দেহ রয়ে গিয়েছে। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের সরকারের কাছে যথেষ্ট মানবিকতা কাম্য। নাগরিক সমাজের করুণ আর্তি এবং আদালতের নির্দেশের পরেও মোদি সরকার দায়িত্বটা যথাযথরূপে পালন করেনি। এখানেই উজ্জ্বল বাংলার সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার বিপন্ন পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। করোনায় মৃত পরিবার পিছু ৫০ টাকার সাহায্য দেওয়া হয়েছে। মাত্র দেড় মাসের ভিতরে মোট আবেদনকারীর ৭৫ শতাংশের কাছে এই অর্থ পৌঁছে গিয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই, রাজ্য সরকারের এই দৃষ্টান্ত করোনা মোকাবিলার এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে উঠেছে। অন্য সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের ক্রমবর্ধমান অশ্রদ্ধার মনোভাবটি দূর হবে।