ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
বিধানসভা নির্বাচনের গুরুত্ব লোকসভার ভোটের থেকে কোনও অংশে কম নয়। অঞ্চল, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ভারতের অলঙ্কার। আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের দক্ষতা বহুলাংশে নির্ভর করে। আঞ্চলিক ভারসাম্য যত ভালো থাকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা তত সহজ হয়। সোজা কথায়, ভারত সরকার অত্যন্ত নিশ্চিন্তে সবার বিকাশের কাজটি চালিয়ে যেতে পারে। তাই রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচনেও দেশ বিপুল অর্থ খরচ করে থাকে। সারা দেশে ৬ লক্ষ ৬৪ হাজারের বেশি গ্রাম। গ্রামের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রূপায়ণ করে থাকে গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রাম পঞ্চায়েতই হল কেন্দ্র বা রাজ্যের মন্ত্রিসভার ক্ষুদ্রতম সংস্করণ। সেই অর্থে এটাই হল গ্রামের ক্যাবিনেট বা মন্ত্রিসভা—তৃণমূল স্তরের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। পঞ্চায়েত সদস্যরা সাধারণভাবে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিতর দিয়েই নির্বাচিত হন। সারা ভারতে আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গঠিত হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের মাধ্যমে। এছাড়া সারা দেশে রয়েছে প্রায় ৩৭০০ আরবান লোকাল বডি, ১০০ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, ১৫০০ মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল, ২১০০ নগর পঞ্চায়েত এবং ৫৬টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। এগুলিতেও বোর্ড গঠন করার ক্ষেত্রে একই গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতি অনুসৃত হয়।
শুধু লোকসভা বা বিধানসভাগুলির জৌলুস দেখে ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল্যায়ন করা যায় না। গণতন্ত্রের আসল ধাঁচা বা কাঠামো হল এই গ্রাম/নগর পঞ্চায়েত, পুরসভা/পুর কর্পোরেশন। সংসদ বা বিধানসভাগুলির মতো গণতন্ত্রের মন্দির মজবুত হতে পেরেছে এইসব স্থানীয় সরকারের পবিত্রতা, দক্ষতা ও পারফর্ম্যান্সের সৌজন্যে। এটিকেই ভারতীয় নির্বাচন ব্যবস্থার ভিত্তিমূল গণ্য করা হয়। গণতন্ত্রের প্রথাগত অনুশীলনের শুভ সূচনা এখান থেকেই। তাই সব পঞ্চায়েত ও পুরসভায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়াই কাম্য। এই স্তরে কোনওরকম অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, কারচুপি এবং হিংসা হলে সেটি যথার্থই গোড়ায় গলদ। গোড়ায় গলদ রেখে মহৎ কিছু লাভ করা সম্ভব নয়। বৃহত্তম গণতন্ত্রের নিজের প্রতি সুবিচারের জন্য তৃণমূল স্তরের গণতান্ত্রিক অনুশীলনটিকে সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ করে তোলা জরুরি। ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার ভোট। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস চায় এই ভোট হবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ও সরকার কোনওভাবেই ত্রিপুরার ভোট-সন্ত্রাসের ছায়া বাংলায় দেখতে চায় না। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারে সবার আগে সতর্ক করে দিয়েছেন নিজের দলের নেতা, কর্মী ও প্রার্থীদের। তাঁর হুঁশিয়ারি, এই ভোটে কোনওরকম বলপ্রয়োগ ও গণ্ডগোলের চেষ্টা যাঁরা করবেন তাঁদের কাউকেই নেতৃত্ব রেয়াত করবে না। যত ওজনদার নেতাই তাঁরা হোন না কেন, দল থেকে তাঁদের তাড়িয়েই দেওয়া হবে। বাংলার রাজনীতিতে এমন কণ্ঠ, এমন আহ্বান সত্যিই অভূতপূর্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের উচ্চাসন থেকে এই ঘোষণা, বাংলার রাজনীতির জন্য অত্যন্ত সুলক্ষণ। এই নীতি অনুসরণ করে ভোট হলে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা দৃঢ় হবে। উজ্জ্বল হবে বাংলার মুখ। সমগ্র গণতন্ত্রের জন্যই অনুকরণীয় হয়ে উঠবে এই বার্তাটি।