সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
সারা ভারত হ্যান্ডলুম সেন্সাস (২০১৯-২০) অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে হ্যান্ডলুম বা হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪০৪ এবং তার উপর নির্ভরশীল তাঁতির সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৫৬। তাঁতবস্ত্র শিল্পে অগ্রণী জেলাগুলি হল—মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর প্রভৃতি। মুর্শিদাবাদে আছে মেগা হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার। ২৫টি ব্লক লেভেল ক্লাস্টার রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। কেন্দ্র নিজে কোনও টেক্সটাইল ইউনিট নির্মাণ করে না। বেসরকারি ইউনিটগুলির উন্নতি বিধানে নীতিগত কিছু পদক্ষেপ করে। যেমন বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে যেখানে পড়তে হয় সেখানে হ্যান্ডলুম সেক্টরকে সংরক্ষণের সুবিধা দেয়। আর দেওয়া হয় কনসেশনাল রেটে লোন, বিমা (যেমন—মহাত্মা গান্ধী বুনকর বিমা যোজনা), বিপণন সহায়তা প্রভৃতি। হ্যান্ডলুম শিল্পের আধুনিকীকরণ এবং অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট নির্মাণে অনুদান দেওয়াও ভারত সরকারের নীতি। সুতো, চট, পশম, রেশম প্রভৃতিকে নিয়ে এই শিল্পে বৈচিত্র আনাও সরকারের কাজ। পুরনো বন্ধ বস্ত্রশিল্পের পুনরুজ্জীবনের দায়িত্বও কেন্দ্রের উপর বর্তায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলার টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বৃদ্ধি আগামী পাঁচবছরে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। বাংলার বয়ন শিল্পের ৭০ হাজার কোটি টাকায় উত্তরণের জন্য এবছরের গোড়ায় একটি টাস্কফোর্স গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। হলদিয়ায় সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকার একটি ইউনিট নির্মাণের প্রস্তাবও পাওয়া গিয়েছে। কলকাতার উপকণ্ঠে নুঙ্গি টেক্সটাইল হাব ৪৪০ কোটি টাকা লগ্নি আকর্ষণ করেছে। হাওড়ার প্রথম স্পিনিং মিল হচ্ছে জগদীশপুরে। মেগা টেক্সটাইল হাব পাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া-অশোকনগর।
বাংলার বয়ন শিল্পপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের অবহেলাতেই তা নষ্ট হচ্ছে। দেশের মোট টেক্সটাইল এক্সপোর্টে বাংলার অংশ মাত্র ২.৭ শতাংশ। আগামী তিন-পাঁচ বছরের ভিতরে এটাকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত করা সম্ভব। কলকাতার মেটিয়াবুরুজে রেডিমেড গার্মেন্টসের যে কারবার চনমনে রয়েছে তার বার্ষিক অর্থাঙ্ক ১৫ হাজার কোটি টাকা। রাজ্য সরকার এটাকে দ্রুত ২৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে বদ্ধপরিকর। নবান্ন মনে করে, কলকাতার হোসিয়ারি শিল্পের সামনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিরাট বাজার পড়ে রয়েছে। বাংলার অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের স্বার্থে এই সুযোগ দ্রুত নিতে হবে। এমন মাহেন্দ্রক্ষণে কেন্দ্র ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ নিয়েছে। করোনা বিধ্বস্ত বস্ত্রশিল্প পরিবেশ এতে সবিশেষ উপকৃত হতে চলেছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ এই শিল্পে ইনসেনটিভ হিসেবে দেওয়া হবে। স্বভাবতই সারা দেশের খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলার সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল তা হতে পারছে না। কারণ এই উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাকে শামিল করা হয়নি, ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। এটাকে কেন্দ্রের সঙ্কীর্ণ রাজনীতি বললে কি অন্যায় হবে? তবে, একযাত্রায় এই পৃথক ফল বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। সিদ্ধান্তটি দ্রুত সংশোধন করে বাংলাকেও এই কর্মসূচিতে শামিল করুন ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর উদ্গাতা নরেন্দ্র মোদি। বাংলার কর্মসংস্থান ও আর্থিক বৃদ্ধির গতি অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থেই এই সংশোধন জরুরি।