কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
তবে মোদি সরকার না চাইলেও সারা দেশেই তদন্তের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে। কারণ, পেগাসাস স্পাইওয়্যারের জন্মদাতা ইজরায়েলের বেসরকারি সংস্থা এনএসও পরিষ্কার জানিয়েছে, ফোনে আড়ি পাতার জন্য শুধুমাত্র সরকারি সংস্থার কাছেই লাইসেন্স বেচে তারা। অদ্ভুত ব্যাপার হল, পেগাসাসের সাহায্যে ভারতের ৩০০-র বেশি নাগরিকের ফোনে আড়ি পাতার ঘটনা সামনে আসার পর তাতে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই বলে দায় অস্বীকার করছে কেন্দ্র! কিন্তু এনএসও থেকে সরকার পেগাসাস সফটওয়্যার কিনেছে কি না—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে ধোঁয়াশা রেখেছে নর্থ ব্লক। যে ঘটনাগুলি সামনে আসছে তা হল, প্রকাশ্যে যাঁরা মোদি সরকারের বিরোধিতা করেছেন, রাফালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যাঁদের কাছে আসল তথ্য রয়েছে, সরকারের কুকর্ম নিয়ে যাঁরা তদন্তমূলক কাজকর্ম চালিয়েছেন, আড়ি পাতা ফোনের তালিকায় তাঁদের নাম এসেছে। আড়ি পেতে এভাবে নজরদারির ঘটনা সমর্থনযোগ্য তো নয়ই, বরং তা অপরাধপ্রবণ মানসিকতারই পরিচয়। প্রশাসনের একাংশেরও বক্তব্য হল, সরকারি নির্দেশ বা সহায়তা ছাড়া এত বড় আড়ি পাতা কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব নয় কোনও বেসরকারি সংস্থার পক্ষে। গোটা ব্যাপারটা ধোঁয়াশায় রেখে মোদি সরকার সত্য উদ্ঘাটনে যেমন অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক তেমনই দেশবাসী অনেকের মনে আতঙ্ক তৈরি করছে। সেইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে অবিশ্বাসের বাতাবরণ। মোদির ‘স্বচ্ছ ভারতে’ এমন অস্বচ্ছ কার্যকলাপের কারণে ভয়ে বেশ কিছু উচ্চপদস্থ আমলা দ্রুত মোবাইল হ্যান্ড সেট বদল করে ফেলেছেন। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিয়েছেন কেউ কেউ। ফোনে আড়ি পাতা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর বহু অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভারত সরকারকে। কারণ আড়ি পাতা তালিকায় এমন অনেক নাম রয়েছে যাঁদের নিয়ে কোনও বিদেশি সংস্থার আগ্রহ থাকাটা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। তাই মনে হতেই পারে, সংসদে বিবৃতি দিয়ে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করলেও দেশজুড়ে বিভিন্ন পেশার নাগরিকের ফোনে আড়ি পাতার কাজ মোদি সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা বা মদত ছাড়া কোনওমতেই সম্ভব নয়। সরকারের এই দায়সারা মনোভাবই সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করে তুলছে। দুর্ভাগ্যজনক যে মোদি জমানায় বহু দেশবাসীই হল এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারির শিকার। তাই খোদ সরকারের বিরুদ্ধে উঠছে বিশ্বাসঘাতকতার প্রশ্ন। এও এই জমানার এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়েই থাকবে।
সাধারণ নিয়মেই দেখা যায়, যে কোনও ঘটনার তদন্ত করে পুলিস। ঘটনার গুরুত্ব যত কমই হোক, তার তদন্ত বাধ্যতামূলক। পুলিসের আইনে একথা বলা আছে। অথচ ফোনে আড়ি পাতার ঘটনার মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগ, যার সঙ্গে জড়িত একটি বিদেশি সংস্থা, যে ঘটনায় নিরাপত্তা ও সংবিধান বর্ণিত ব্যক্তি-স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার মতো গুরুতর প্রশ্ন উঠে এসেছে, সেখানেই নির্বিকার মোদি সরকার! তাদের তদন্তে অনীহা কি সত্য গোপনের প্রচেষ্টা? প্রশ্ন উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই গেরুয়া শিবির ছাড়া দেশে প্রায় এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যারা এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের দাবি জানায়নি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি তো ফোনে আড়ি পাতাকে ‘দেশদ্রোহীর’ তকমা দিয়েছেন। তাই প্রশ্ন, পেগাসাস কাণ্ডে যুক্ত না থাকার যে দাবি কেন্দ্র করেছে তা সত্যি হলে তদন্তে আপত্তি কেন? বরং মোদি-শাহদের এই অবস্থান থেকে ‘ডাল মে জরুর কুছ কালা হ্যায়’-এর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সন্দেহ নেই, এই নিয়ে কেন্দ্র যত রহস্য তৈরি করবে, বিরোধীদের দাবি নস্যাৎ করে তদন্ত না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে, ততই মোদি-শাহের জড়িত থাকার অভিযোগ আরও প্রাণ পাবে।