বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
প্রশ্ন উঠেছে, এই খোচর বৃত্তির দায় কার? সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের জনক এনএসও সংস্থার দাবি, দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা মোকাবিলা করতে শুধুমাত্র সরকারি সংস্থাকে সাহায্য করার জন্যই তৈরি হয়েছে পেগাসাস। ভারতসহ একাধিক দেশকে এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করা হয়েছে। সেই দাবি সঠিক হলে স্বভাবতই এই চরবৃত্তির দায় গিয়ে পড়ে মোদি সরকারের ঘাড়ে। সরকার ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ বলে দায় ঝেড়ে ফেললেও পেগাসাস সফটওয়্যার কেনা নিয়ে কিন্তু উত্তর এড়িয়ে গিয়েছে। কেন? সঙ্গতভাবেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, এনএসও-র মতো একটি বেসরকারি সংস্থা কেন এমন চরবৃত্তি করতে যাবে? তাদের এতে লাভ কী? পেগাসাসের দাবি আর বিরোধীদের প্রশ্নের পর জোরালো হয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ। এছাড়াও সত্যিই যদি ইজরায়েলের কোনও সংস্থা ভারতবর্ষে ফোন ট্যাপ করে চরবৃত্তি করে থাকে তাহলেও ভারত সরকার তার দায় অস্বীকার করতে পারে না। কারণ এর সঙ্গে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও ব্যক্তি পরিসরের অধিকার রক্ষার প্রশ্নটি জড়িত। তদন্তে প্রকাশ, ২০১৮-১৯ সালেও চরবৃত্তির আওতায় এনে বিরোধীদের বহু ফোন নম্বরকে নিশানা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোট পর্যন্ত চলে এই চরবৃত্তির কাজ। তার মানে আড়িপাতার উদ্দেশ্য স্পষ্ট। রাজ্যসভার তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অবশ্য সে-সময়ে বলেছিলেন, আড়িপাতার কোনও বেআইনি নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কিন্তু দেখা গিয়েছে, যাঁরাই সরকারের বিভিন্ন কুর্কীতি ফাঁস করতে অনুসন্ধান চালিয়েছেন, সরকারের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মুখ খুলেছেন, ‘শত্রু’ হিসেবে দেগে তাঁদের ফোনেই আড়িপাতার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ তুলেছিলেন আগেই। তাই কেন্দ্র জেনে-বুঝে আড়িপাতার অংশীদার হচ্ছে কি না তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রমাণের দায় সম্পূর্ণভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের।
আসলে একের পর এক কেলেঙ্কারি। তাই নিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা মোদি সরকারের। নাগরিকত্বের প্রশ্ন, কৃষি আইন, জ্বালানির তেলের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি, বিজেপির রোল মডেল দুই রাজ্য গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশে একের পর এক কেলেঙ্কারি, রাফাল কাণ্ড, দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে তৎপরতা, সর্বোপরি করোনা মোকাবিলায় চূড়ান্ত ব্যর্থতা তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই সরকারকে। তালিকায় নতুন সংযোজন পেগাসাস কেলেঙ্কারির এই ঘটনার। মোদি জমানায় বারবার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। শুধু বিরোধীরা নয়, নিজেদের দলের বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের উপর নজরদারি চালিয়ে যেভাবে দেশ চালাতে চাইছে এই সরকার তা কি গণতন্ত্রের প্রতি তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের নিদর্শন! ফের আর একবার ইজরায়েলি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার তৈরি স্পাইওয়্যার দিয়ে তথ্য হাতানো বা নজরদারি চালানোর অভিযোগটি সামনে আসায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ওই সংস্থাকে বরাত দিল কে? এই ইস্যুতে এখন রাজধানীর রাজনীতি সরগরম। সরকারও চাপে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে গিয়ে এখন মোদি সরকার কোন চাল দেয়, সেটাই দেখার।