পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
প্রথম ঢেউয়ে ভারতের বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। বহু মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু, ১৩৫ কোটির বেশি মানুষের সুবিশাল দেশ ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে ভারতের এই ক্ষতিটা ছিল মন্দের ভালো। আমেরিকা, ব্রাজিল ও ইউরোপের সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান পাশাপাশি রাখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়। আর্থ-সামাজিক দিকটির সুরক্ষায় সরকার যথেষ্ট ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার পরেও এবছরের গোড়ার দিকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল তামাম ভারতের অর্থনীতি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক প্রভৃতি মান্য অর্থ-প্রতিষ্ঠানগুলিও ভারতীয় অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন নিয়ে বিশেষ আশা ব্যক্ত করে, মাস কয়েক আগে। জিডিপি বৃদ্ধির হার তার আগে চার দশকের মধ্যে নিম্নতম হয়েছে, এই তথ্য মাথায় রেখেই তারা এতটা আশাবাদী ছিল। কিন্তু, তারপর ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক প্রভৃতি নেতৃস্থানীয় আর্থিক সংস্থাগুলিও প্রমাদ গুনতে শুরু করে। কারণ ততদিনে থাবা বসিয়ে দিয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সফল হওয়া সবসময়ই গর্বের। কিন্তু সেই সাফল্য অক্ষুণ্ণ রাখতে পারার কৃতিত্বটা আরও বড়। সেই মহতের ভূমিকা পালনে ভারত যার পর নাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ওই ছিদ্রপথেই প্রবেশ করেছে দ্বিতীয় ছোবল। সরকারি ও বেসরকারি একাধিক নামী হেলথ কেয়ার সংস্থার পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যাচ্ছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে সার্বিক মৃত্যুহার প্রথম ঢেউকে অনেকখানি ছাপিয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ থেকে রেহাই পায়নি কম বয়সি ছেলেমেয়েরাও। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আক্রান্তদের চিকিৎসায় অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়েছে অনেক বেশি। এই দুই ঢেউয়ে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে, ৩০ জুন পর্যন্ত ডাক্তার মারা গিয়েছেন ৭৯৮ জন। এছাড়া আমরা হারিয়েছি নানা ক্ষেত্রে আরও বহু গুণী মানুষকে।
বহু ত্যাগ এবং ক্ষয়ক্ষতি স্বীকারের ভিতর দিয়ে আমরা ফের একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ফিরতে চলেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক পজিটিভিটির হার একটানা ২২ দিন ৩ শতাংশের নীচে রয়েছে। এখন দেশের সব প্রান্তের সব মানুষকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে তৃতীয় ঢেউ রুখে দিতে। সরকার কিছু নির্দেশ জারি করতে পারে। প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বিধি রূপায়ণের জন্য। প্রশাসন জবরদস্তি করতে পারে কিছু অবাধ্য নাগরিকের উপর। কিন্তু, সেটা সভ্যসমাজের লক্ষণ নয়। সচেতন সুশৃঙ্খল নাগরিক পরিচয়ের ভিতরেই বেঁচে থাকে সভ্যসমাজ। মাস্ক মাস্ট। স্যানিটাইজার ব্যবহারের উপযোগিতা মেনে চলা। বাস, ট্রেন, বাজার-সহ সর্বত্র দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখা। জমায়েত এড়ানো। সর্বোপরি, করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ রুখে দেওয়ার আর কোনও উপায় নেই। আমরা যেন ভুলে না যাই, ইতিমধ্যেই অনেক দেশ তৃতীয় ঢেউয়ের থাবা এড়াতে পারেনি। তার মধ্যে রয়েছে নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশও। ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের অনুপ্রবেশ এবং তৃতীয় ঢেউ কবলিত দেশগুলির ব্যর্থতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তৃতীয় ঢেউ রুখতেই হবে আমাদের। এই শপথ নিতে হবে ব্যক্তিগত এবং দেশের স্বার্থে। সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ রুখতে পারার ব্যর্থতা কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য ‘অপরাধ’ হয়ে উঠতে পারে। তখন নিজেদেরকেও হয়তো ক্ষমা করতে পারব না আমরা।