পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
জিএইচআই ২০২০ অনুসারে, ভারতের স্থান ছিল ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪। ভারতের স্কোর ছিল ২৭.২। তার ফলে ভারত ‘সিরিয়াস হাঙ্গার ক্যাটিগরি’-ভুক্ত হয়ে যায়। ২০১৯-এ ভারতের পজিশন ছিল ১১৭টি দেশের মধ্যে ১০২তম। লক্ষ্যণীয় এই যে, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে নেপাল (৭৩), বাংলাদেশ (৭৫) ও পাকিস্তানের (৮৮) মতো প্রতিবেশীরা। ক্ষুধার জ্বালার প্রশ্নে মাত্র ১৩টি দেশ আমাদের পিছনে। ওই হতভাগ্য দেশগুলি হল—রোয়ান্ডা, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, লাইবেরিয়া, মোজাম্বিক, চাদ প্রভৃতি। আমাদের যত লড়াই চীন আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। চীনের পজিশন কী? ক্ষুধা নিবৃত্তির প্রশ্নে সফল দেশগুলির প্রথম সারিতেই রয়েছে চীন। জিএইচআই রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে, ভারতের ১৪ শতাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার। ৩৭-৩৮ শতাংশ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না। ১৯৯১-২০১৪ সালের সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন—ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল প্রভৃতি দেশে অপুষ্টির কারণে বহু শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয় না। কিছু দেশ খুব দেরিতে হলেও উন্নতি করছে। আবার অনেক দেশের ক্ষেত্রে কোনও উন্নতি হচ্ছে না, বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে। ‘মোটামুটি’, ‘ভয়ানক’ অথবা ‘উদ্বেগজনক’ শ্রেণিতে ছিল—এমন ৪৬টি দেশের ক্ষুধা সূচক ২০১২ থেকে ধাপে ধাপে কিছুটা উন্নত হয়েছে। অন্যদিকে, ১৪টি দেশের মানুষের ক্ষুধা ও অপুষ্টি আরও বেড়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সার্বিকভাবে মনে করছেন, ৩৭টির মতো দেশ ২০৩০ সালের ভিতরেও ক্ষুধামুক্তির লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হবে।
এই ছবি মানবিক গুণসম্পন্ন প্রতিটি ব্যক্তিকে দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন করে। কারণ, খিদের যন্ত্রণার থেকে বড় কিছু হয় না। কখনও এটি মৃত্যু-যন্ত্রণারও অধিক মনে হতে পারে। আজকের প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হল, করোনা মহামারীতে আক্রান্ত পৃথিবীতে উপর্যুক্ত পরিস্থিতির কতটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে? কোনও সংশয় নেই, পরিস্থিতির যে পরিবর্তন ঘটেছে সেটি নেতিবাচক। খিদের জ্বালা অবশ্যই বেড়েছে। কিন্তু কতটা? আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের তরফে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘দ্য হাঙ্গার ভাইরাস মাল্টিপ্লাইস’ রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, অনাহারে প্রতি মিনিটে পৃথিবীতে ১১ জনের মৃত্যু হচ্ছে! সাড়ে ১৫ কোটি মানুষ দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারছে না। সংখ্যাটি গত বছরের তুলনায় ২ কোটি বেশি। অর্থাৎ খিদের যন্ত্রণা একবছরে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে। আর মাত্র ন’বছরের ভিতরে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী নির্মাণের স্বপ্ন যখন দেখছি আমরা, তখনই এই বিপরীত গতি! মহামারীর পাশাপাশি যুদ্ধ-সংঘর্ষ এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনকেও দায়ী করেছেন অক্সফাম কর্তৃপক্ষ। মহামারী এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে খাদ্যদ্রব্যের দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই কারণটি লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনাহারের আঙিনায় নিক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে, মহামারীর পরিবেশেও বিভিন্ন দেশ সামরিক খাতে খরচ করেছে ৫,১০০ মার্কিন ডলার। অথচ, এর ৬ ভাগের ১ ভাগ অর্থ পেলেই সকলের মুখে খিদের অন্ন জোগাতে পারত রাষ্ট্রসঙ্ঘ। আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেন প্রভৃতি কিছু দেশকে ‘দি ওয়ার্স্ট হাঙ্গার হট স্পটস’ চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতবাসীর স্বস্তি এই যে, এই তালিকায় ভারতের নামটি নেই। কিন্তু, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের টাটকা খোঁচা আমরা বিস্মৃত হব কী করে? তাত্ত্বিক বিচার সরিয়ে রেখে, স্রেফ মানবিক দৃষ্টিতে পুরোটা ভাবতে হবে আমাদের। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র সবুজ বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়েই বেড়েছে মাছ, মাংস, ডিম, দুধের উৎপাদন। তারপরেও এই যে কয়েক কোটি মানুষের খিদের যন্ত্রণা, অপুষ্টির অভিশাপ—তার জন্য দায়ী মানবিকতাশূন্য রাষ্ট্রীয় নীতি, অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বণ্টনব্যবস্থা, সর্বোপরি যুদ্ধবাজ মনোবৃত্তি। সব দেশ একযোগে এই চক্রব্যূহ থেকে বেরতে আন্তরিক না-হলে পৃথিবীর পক্ষে ক্ষুধা বা দারিদ্রমুক্ত হওয়া অসম্ভব।