পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এই অব্যবস্থা হাজার হাজার মানুষকে বাধ্য করছে বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে। কিন্তু সেটা কতটা উন্নত, বিশ্বস্ত এবং সাধ্যের মধ্যে সেই প্রশ্নগুলিও পুরনো। গ্রাম-মফস্সল, এমনকী অনেক ছোট শহরে বহু মানুষ কিছু নার্সিংহোমে গিয়ে একটা সময় পর আবিষ্কার করে যে প্রতারকদের পাল্লায় পড়েছে। শীর্ষকর্তাটি আদৌ কোনও ডাক্তার নয়। এমনকী ডাক্তার, নার্স প্রভৃতি পরিচয়ে যাদের নামে মোটা অঙ্কের বিল তৈরি হয় তাদেরও কেউ কেউ ভুয়ো। এছাড়া বেড ও আইসিইউ ভাড়া, নানা প্রকার টেস্ট, অপারেশন প্রভৃতি বাবদ অন্যায্য বিল করার গুরুতর অভিযোগ থাকে বড় বড় কিছু বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের অসাধু চক্রও এদেশে একটা যন্ত্রণার বিষয়। ভাবা গিয়েছিল, মহামারীর কাল সকলকে শুভবুদ্ধি জোগাবে, মানবিক করে তুলবে। কিন্তু কোথায় কী! করোনার ভুয়ো টেস্টের চক্র যেমন গজিয়ে উঠেছে নানা জায়গায়, তেমনি দেখা যাচ্ছে নকল রেমডিসিভির এবং নকল টিকারও কারবার ফেঁদেছে কিছু পাষণ্ড। টাটকা অভিযোগ, কোনও গাঁ-গঞ্জ নয়, ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের মতো জায়গার একটি অভিজাত আবাসনের বাসিন্দারাও ভ্যাকসিন দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। পাঁচ লক্ষ টাকা দক্ষিণা গুনে নিয়ে সেখানকার ৩৯০ জন আবাসিককে কোভিড ভ্যাকসিনের বদলে নাকি ‘জল’ পুশ করা হয়েছে! কোনও সন্দেহ নেই, দেশে একটা চাঙ্গা সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকলে এতক্ষণ যত ভয়ানক ঘটনার কথা বলা হল, তার কোনওটাই হয়তো ঘটত না। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্য এবং দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে এখনও অবধি তা অপরিমেয়। মহামারীর তাণ্ডব এখনও থামেনি। কবে সত্যিকার রেহাই মিলবে, কেউ জানে না। এই বিষয়ে এখনও যা মতামত বেরিয়ে আসছে তা বহুলাংশেই অনুমান, যার মধ্যে স্থিরতা নেই। ব্যাপার যা চলছে তা অন্ধের হস্তীদর্শনের সঙ্গেই তুলনীয়। তবে, এটুকু অনুমান করা শক্ত নয় যে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি এবং অর্থনীতির চাকায় গতিসঞ্চার দ্রুত না-হলে ভারতের সার্বিক ক্ষতির বহরটা আরও অনেক বড় হবে। ভারত পিছিয়ে যাবে অন্তত একদশক।
তাই বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতির পণ্ডিতের প্রত্যাশা ছিল যে, মোদি সরকার এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে দ্রুত ঢেলে সাজার ব্যবস্থা করবে। প্রথমত, দেশজুড়ে বাড়াতে হবে হাসপাতাল ও বেডের সংখ্যা। বাড়াতে হবে ডাক্তার, নার্স এবং যুগোপযোগী ফেসিলিটি। আর দরকার উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বিকেন্দ্রীকরণ। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও (পুষ্টিকর খাদ্য, পরিস্রুত পানীয় জল প্রভৃতি) প্রতিটি নাগরিকের নাগালে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ অনেকখানি বাড়ানো দরকার। এই প্রসঙ্গে জানানো দরকার যে, ভারত জিডিপির মাত্র ১.২৮ শতাংশ হেলথকেয়ারে ব্যয় করে। ব্রিকস এবং ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে যা সবচেয়ে কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পরামর্শ, সংখ্যাটি সব দেশ বাড়িয়ে অন্তত ৪-৫ শতাংশ করুক। মোদি সরকার গত জানুয়ারিতে ঘোষণা করেছিল, সংখ্যাটিকে বাড়িয়ে তারা ২.৫ শতাংশ করবে। বলা বাহুল্য, এটা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এখন শোনা যাচ্ছে, এই সরকারের আসল মতলব হল স্বাস্থ্যব্যবস্থার আরও বেসরকারিকরণ। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য সরকার ঋণের ঝাঁপি খুলে দেবে মাত্র। এতে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পরিবর্তে যে আরও ডুবে যাবে, মানুষের দুর্দশা আরও বাড়বে, এটা আগাম বলে দেওয়া যায়।