কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অর্থনীতি শাস্ত্রের একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত। দেশে-বিদেশে তাঁর সুনাম। সেই সঙ্গে অত্যন্ত সজ্জন মানুষ। তাঁর সঙ্গে আর পাঁচটা রাজনীতিকের শিক্ষায়, সংস্কারে বিস্তর ফারাক। প্রায় সাতমাস পর ডাকা জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এবার রাজ্যগুলির দাবি ছিল, করোনার ভ্যাকসিন সহ এই সংক্রান্ত যাবতীয় সরঞ্জামের উপর জিএসটি পুরোপুরি মকুব করে দিতে হবে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে সমর্থনযোগ্য প্রস্তাব। পশ্চিমবঙ্গ সহ ৯টি রাজ্য এ ব্যাপারে একজোটও হয়েছিল। কিন্তু অবিজেপি রাজ্যগুলির এই দাবি মানতে রাজি ছিলেন না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, জিএসটি পুরোপুরি মকুব করতে গেলে নতুন করে অর্ডিন্যান্স আনতে হবে। তখন রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাহলে জিএসটি কমিয়ে ০.১ শতাংশ করা হোক। সেক্ষেত্রে শুধু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেই তো চলবে। কিন্তু তাতেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কর্ণপাত না করায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, এতে নাকি ব্যবসায়ীদের প্রাপ্য ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট কমে যাবে। মোদি সরকারের অদ্ভুত সাফাই। অসহায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। লকডাউনে গরিব মানুষের হাঁড়ি চড়ছে না, আর সরকার ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের গল্প ফাঁদছে! এই যখন পরিস্থিতি, তখন বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী তাঁর জোরালো বক্তব্য রাখতে গেলে তাঁকে বলতেই দেওয়া হয়নি। অমিত মিত্রের মাইকের সুইচ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়! গণতন্ত্রে এভাবে এক অঙ্গরাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে বৈঠকে ডেকে বলতে না দেওয়া অমার্জনীয় অপরাধ। সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরোধী কাজ। এভাবে কারও কণ্ঠরোধ সুস্থ ও স্বাধীন মূল্যবোধের পরিপন্থী।
পাঠকের মনে থাকতে পারে, সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চুয়াল বৈঠক। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁকে একটি কথাও বলতে দেননি প্রধানমন্ত্রী। তখনও বাংলার অপমান করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী তার কড়া জবাবও দেন। আর এবার জিএসটি কাউন্সিলে অসম্মানিত বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। অথচ জিএসটি কাউন্সিল সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতের উপরই দাঁড়িয়ে। কেন্দ্রের গা-জোয়ারির জায়গা মোটেই নয়। দেশের সবকটি রাজ্যের প্রতিনিধিরই সেখানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখার কথা। প্রতিবাদ জানানোর কথা। জিএসটি কাউন্সিলের মঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গা নয়। অথচ বিরোধীদের পুতুল করে বসিয়ে রেখে কেন্দ্র যা খুশি করছে। এই স্বৈরতন্ত্রী আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই অপমানিত হয়েছেন অমিতবাবু। উল্লেখ্য, শুধু কোভিড সরঞ্জামে জিএসটি কমানোই নয়, রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারেও কেন্দ্র দাবি মানছে না। কার্যকর হওয়া জিএসটি আইনের প্রসঙ্গ তুলে অমিতবাবুরা সব রাজ্যের জন্য প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছেন। তার মধ্যে এরাজ্যের পাওয়ার কথা ৪৯১১ কোটি টাকা। অথচ সেই দাবি মানার ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কানে তুলো গুঁজেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাণবায়ু বিরোধীরাই। শুধু সংখ্যার জোরে তাঁদের দমিয়ে রাখার ফল ভালো হতে পারে না। বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত একদিন ব্যুমেরাং হতে বাধ্য।