কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
রাজনীতির খেলায় পরাজয়ের জবাব দিতে হয় রাজনৈতিকভাবেই, তার নীচে যন্ত্রণা যত ভীষণই লুকিয়ে থাক। রাজনৈতিক জবাব প্রস্তুত করতে হয় মানুষের মঙ্গলের কথা ভেবে, মানুষকে সামনে রেখে, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তির জিঘাংসু মনোবৃত্তি দূরে সরিয়ে রাখতে না পারলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা যায় না। উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপির নয়া খেলাকে তাই রাজনৈতিক মোকাবিলয়ার পর্যায়ভুক্ত করা যাচ্ছে না। বাংলার মাটিতে পরাজয়ের গ্লানি বিজেপিকে ক্রমে যেন রাজনৈতিক প্রতিযোগীর আসন থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। জ্বলছে তারা তীব্র ক্রোধের আগুনে। সেই আগুনে শান্ত বাংলাটিকেও ছারখার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র ফের পাল্টে দিতে পাগল হয়ে উঠেছে নরেন্দ্র মোদির দল। বাংলার মানচিত্রের উপর অতীতে বারবার আঘাত নেমে এসেছে। সবচেয়ে বড় আঘাতটি দিয়ে গিয়েছে বিভাজনের রাজনীতির শকুনি ব্রিটিশরা। স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে সেই যন্ত্রণা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে, ভুলে যাওয়া যদিও সম্ভব হবে না কোনওদিন। আর প্রিয় স্বাধীনতার পঁচাত্তর বর্ষ পূর্তির প্রাক্কালে বিজেপি কি নতুন করে বাংলা মায়ের বুক ক্ষতবিক্ষত করতে চায়?
নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘আসল পরিবর্তন’ আনবেন। সত্যিকার ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণ করবেন। তার জন্য সুবিশাল এক ইস্তাহার তৈরি করেছিল তাঁর দল। ভোটের বাজারে প্রধানমন্ত্রী বার বার ছুটে এসেছেন বাংলায়। বাংলার বীরদের ও ঐতিহ্যের বন্দনা করে এবং বাংলা ভাষায় দু’-চারটি কথা বলে বাঙালিকে খুশি করতে চেয়েছেন। বাঙালির শ্রেষ্ঠ ধন রবীন্দ্রনাথের আদল আনার চেষ্টা করেছেন নিজের মুখাবয়বে। ভারতের অতীতের কোনও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বাংলা নিয়ে এই আগ্রহ আমরা দেখিনি। ভোট মিটতে না মিটতেই সেই মোদির পার্টি তাহলে কী প্রমাণ করতে চাইছে—মোদি আদৌ কোনও নেতা নন, স্রেফ একজন সস্তার অভিনেতা! মঞ্চ পেলেই তিনি অভিনয়ে নেমে পড়েন? যেমন করে গেলেন পটুতার সঙ্গে বাংলার প্রান্তে প্রান্তে এসে? সত্যিই তো, তাঁর ভোটের বক্তব্য আন্তরিক হলে বিজেপির ভাবনা এরকম ভয়ঙ্কর হতে পারত না। ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণের স্বপ্নটা সত্যি হলে সেই মানচিত্রটাকে তো প্রথমে অটুট রাখতে হবে। কিন্তু কোথায়? কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি আজ নতুন করে বঙ্গভঙ্গের মূলচক্রী! বাংলা কি শিশুর হাতের একটি খেলনা? পেলাম না যখন ভেঙেই ফেলব! সত্যিই তো, স্বঘোষিত বেনিয়াদের কাছ থেকে এর অতিরিক্ত কোন মানবিকতা, কোন উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি আশা করা যায়? সেটা অবশ্য বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবারের সমস্যা। বাংলার একজনও মানুষ এই বিভেদকামী কদর্য পলিটিকস মেনে নেবে না। দিল্লির নষ্টামি কীভাবে রুখতে হয় তা দেখিয়ে দেবে সর্বশক্তি দিয়ে। ভারতের ইতিহাসে এ নিয়ে শত শত পাতা ইতিমধ্যেই লেখা রয়েছে। সেই উজ্জ্বল অধ্যায় মূলত বাংলার ও বাঙালির বীরগাথা। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জগৎপ্রকাশ নাড্ডারা সেসবে চোখ বুলিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। সময় হয়েছে, এবার যে তাঁদের মনোযোগ দিয়ে ওই পাতাগুলিই পড়ে নিতে হবে।