পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
প্রথম কারণ, ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের সঞ্চয় প্রকল্পগুলোতে সুদের হার অত্যন্ত কম। অন্যদিকে, চিটফান্ডগুলিত রয়েছে মোটা অঙ্কের সুদ অথবা লভ্যাংশের হাতছানি। তার পরের কারণটা হল, এই সমস্ত ফান্ডের গ্রাহক হওয়ার, বা তাদের কাছে টাকা জমা করার কোনও হ্যাপা নেই। অনেক সময় সামান্য নথি লাগে, কিংবা কোনও নথি ছাড়াই তাদের গ্রাহক হওয়া যায়। কিন্তু, বিশেষ করে অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাওয়াটা এখনও যেন অপরাধ। গ্রাহক দিনের পর দিন হেঁটেও ব্যাঙ্ককর্মীদের কাছ থেকে সাড়া পান না। এমনকী অনেক আমানতকারী দুর্ব্যবহারেরও শিকার হন। তারপর টাকা জমা দেওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁদের কাছে সবসময় সুখকর নয়। উল্টোদিকে, চিটফান্ড এজেন্টরা টাকা নেয় বাড়িতে গিয়ে, আমানতকারীদের সুবিধামতো। তিন নম্বর কারণ হল, স্বল্প সঞ্চয় স্কিমের এজেন্টদের আয় ভীষণ কমে গিয়েছে। ফলে সরকারি স্কিমগুলোতে তাঁরা আর বিশেষ উৎসাহ পান না। নিকট বিকল্প কোনও পেশার দিকেই ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। সেটা অনেক ক্ষেত্রে চিটফান্ডের প্রতিনিধিত্বও। চার নম্বর কারণ, নাগরিকদের মধ্যে শিক্ষার হার কম ও জীবনমুখী শিক্ষার নিতান্তই অভাব। প্রচারেরও অভাব রয়েছে সরকারের তরফে। বড় কোনও কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশজজুড়ে যখন প্রচণ্ড হল্লা চলে, শুধু তখনই মানুষকে সচেতন করতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলো প্রচারে নামে। তারপর শান্ত জলে ওঠা ঢেউয়ের নিয়মে দ্রুত থিতিয়ে যায়। পাঁচ নম্বর কারণ, চিটফান্ডের নামে লোক ঠকানোর কারবার প্রতিরোধের আইন এখনও যথেষ্ট দুর্বল। কাজের কাজ হবে—অর্থাৎ আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে এবং প্রতারকরা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পাবে—আইনের সেইমতো সংস্কারও হয় না। ছয় নম্বর কারণ, আইন যেটুকু আছে তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আরও বেশি। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হল—কেন্দ্র, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবটা চোখে পড়ার মতো। সঞ্চয়িতা, ভেরোনা, সারদা, রোজভ্যালি, এমপিএস অতীতের প্রতিটা কেলেঙ্কারির পর দেখা গিয়েছে একযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে তাদের মধ্যে দায় এড়াবার প্রতিযোগিতাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
দুর্বল আইন এবং নড়বড়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভয়াবহ কোভিড পরিস্থতি। বেকারত্বের হার হু হু করে বাড়ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্রবীণ নাগরিকদের। বেশিরভাগের পেনশন নেই, অথবা থাকলেও তা প্রহসনের নামান্তর। স্বভাবতই তাঁদের জীবন সামান্য সঞ্চয় থেকে সুদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে মোদি সরকারের সৌজন্যে বেশিরভাগ মানুষের আয় কমে গিয়েছে। প্রতিদিন আরও কমছে। এর শেষ কোথায় কেউ জানে না। এই মওকাতেই প্রবেশ করেছে নতুন বিপদ। দেশীয় বাটপাড়দের চমকে দিয়ে সাধারণ মানুষের মাথা মুণ্ডন করছে এখন টেকস্যাভি চীনা জালিয়াতরা। কিছু অ্যাপ সামনে রেখে সঞ্চয়ের মাধ্যমে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রলোভন ফেরি করছে তারা। এরপর ভারতীয় নাগরিকদের টাকা এবং ব্যক্তিগত বহু তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্ভবত নিজেদের অজ্ঞাতে ভারতের বিরুদ্ধে চরবৃত্তিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে কিছু ভারতীয় নাগরিক। চীনা এই জাল ইতিমধ্যেই বিস্তৃত হয়েছে ভারতের নানা প্রান্তে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলা এবং বাঙালিরাও। সংবাদে প্রকাশ, গত বুধবার দিল্লি পুলিসের সাইবার সেল চীনা নাগরিকদের একটা সিন্ডিকেটের বিরাট গোপন কারবার ফাঁস করেছে। ফেক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপের ফাঁদে ফেলে তারা ইতিমধ্যেই পাঁচ লক্ষ ভারতীয় নাগরিকের ডেটা চুরি করেছে। ওইসঙ্গে প্রতারণাও করেছে দেড়শো কোটি টাকার বেশি। দিল্লি এই কেসে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে এগারোজন চীনা নাগরিককে। তাদের মধ্যে রয়েছে দু’জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট! নয়া এই জালিয়াতদের দেখে বিএসএফ, উত্তরপ্রদেশ পুলিসের এসটিএফ প্রভৃতিও বিশেষভাবে নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু ভারতবাসীর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বলে, এ কোনও স্থায়ী সমাধানের রাস্তা নয়। ব্যাপারটা গোড়া কেটে গাছের ডগায় জলসিঞ্চনের মতোই আত্মপ্রবঞ্চনা মাত্র। ভদ্রস্থ সুদের হারে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের সুযোগটা দ্রুত ফেরাতেই হবে। এখনই লাগাম টানতে হবে বেকারত্বের হারে। বাড়াতে হবে শিক্ষার হার এবং সাধারণ মানুষের সচেতনার স্তর। অন্যথায়, দিন দিন আর্থিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে নিরীহ মানুষকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সামগ্রিক অর্থনীতিকেও তার জন্য দিতে হবে বিরাট মূল্য।