পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এখনও ভাবতে অবাক লাগে, বহু আন্দোলন সংগ্রামের সাক্ষী সিপিএম এবং তাদের দোসররা কেন দেওয়াল লিখনটা পড়তে ব্যর্থ হয়েছিল। তারা কেন মনে রাখেনি, খাঁচার বাইরে ছাড়া রয়েছেন ভয়ানক তেজস্বিনী বাংলার বাঘিনী! হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বশক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলার গরিব নিরীহ নিরপরাধ কৃষকদের। তিনি শপথ নিয়েছিলেন, কৃষকদের রুটিরুজি ধ্বংস হতে দেবেন না। তাঁদের পিতৃপুরুষের জমিজমা, ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করার সরকারি নীল নকশা ছুিঁড়ে পুড়িয়ে তবেই ছাড়বেন। বাম সরকারের বর্বর পুলিস ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে তিনি যেভাবে বুক চিতিয়ে গণ আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন, তা আজ ইতিহাস। ২০১১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের স্বপ্ন চুরমার করেছিলেন মমতা প্রায় একাই। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসের এই অত্যুজ্জ্বল অধ্যায় রচনার পিছনে নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর নামে দু’টি কৃষক আন্দোলনের সাফল্যের ভূমিকা অপরিমেয়। মানুষের মনে বাম সরকারের জন্য বিদায়বার্তা লেখা যখন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, তখনই শুধরে যাওয়ার কৌশল করেছিল সিপিএম। বিমান বসুরা ‘উন্নতর বামফ্রন্ট সরকার’ আর ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগান তুলেছিলেন। মরণকালে হরিনামের মতোই তা নিষ্ফলা হয়েছিল, সবাই জানে।
এমন টাটকা দৃষ্টান্ত সামনে থাকতেও প্রায় একইরকম ভুল পথ অনুসরণ করেছে মোদি সরকার। তারা ভুলে গিয়েছে, দেশ যতবার বিপদে পড়েছে একমাত্র কৃষিক্ষেত্র এবং কৃষক সমাজই রক্ষাকর্তার ভূমিকায় নেমেছে। এই কোভিডকালেও উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা একমাত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে সমর্থ হয়েছে কৃষি। চলতি দু’বছরের কয়েকটা ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার নেগেটিভ। একইভাবে খুব খারাপ অবস্থা লেবার পার্টিসিপেশন রেট এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারের। একমাত্র কৃষিক্ষেত্রে কাজের সুযোগটা ঠিকঠাক আছে। শহুরে বেকারদের একটা অংশকে কৃষি সাময়িক আশ্রয়ও দিয়ছে। তা না-হলে বেকারত্বের হার আরও কত ভয়ানক যে হতো, ভাবতেই শিউরে উঠছেন অর্থনীতিবিদরা। সহজ কথাটা এই যে, বিকাশের ছবিতে কৃষিতে বৃদ্ধির এই উজ্জ্বল হারটা যুক্ত না-হলে ভারতের অর্থনীতির কঙ্কালটাই শুধু পড়ে থাকত সামনে। তারপরেও মোদি সরকার নতুন তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এবং বিজেপি-বিরোধী সব দলের বক্তব্য, এই আইনগুলোতে কর্পোরেটদের স্বার্থপূরণেরই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এতে মারা পড়ে যাবেন গরিব কৃষকরা। অথচ তাঁদেরকেই এই দেশ ‘অন্নদাতা’র আসনে বসিয়েছে। আইন তখনও তৈরি হয়নি, কৃষিবিলের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছে গত আগস্টের গোড়ায়। আইন পাশের পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বৃহত্তর আকার নেয়। ইউরোপ, আমেরিকা সহ পৃথিবীর নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তার ঢেউ। দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষকদের অবস্থান আন্দোলন আজও অব্যাহত। কিন্তু বিজেপি সরকারের হাতে অন্নদাতাদের জন্য লাঠৌষধির অধিক কিছু নেই। আন্দোলনকারী কৃষকদের মোর্চা পরিষ্কার বুঝে গিয়েছে, জয় হাসিল করতে হলে এই আন্দোলনের রাশ দেশের যোগ্যতম নেতার হাতেই তুলে দিতে হবে। তিনি আর কেউ নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের স্বার্থরক্ষার লড়াইয়ের ভিতর দিয়েই তাঁর উত্থান। একইসঙ্গে বাংলার মাটিতে তাঁরই কাছে সদ্য সদ্য গোহারা হয়েছেন মোদি, কৃষক ঠেঙিয়ে মিশকালো হয়ে রয়েছে যাঁর দু’হাত। কৃষক মঞ্চের দূরদর্শিতাকে কুর্নিশ, ২০২৪-এ ভারতের মসনদ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে বিদায় করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই সেরা বাজি।