গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ভারতে প্রথম কোভিড রোগীর সন্ধান মেলে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। তারপর একবছর চারমাসের বেশি পেরিয়ে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত সময়কালকে প্রথম ঢেউ বলে ধরা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক কোভিড সংক্রমণের বহর ছিল ৯০ হাজারের বেশি। সেটা জানুয়ারি, ২০২১-এ মাত্র ১৫ হাজারে নেমে আসে। সব মিলিয়ে প্রথম ঢেউ বহু ভারতবাসীর প্রাণও নিয়েছে। তবু ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, ব্রাজিলকে পাশে রেখে সারা পৃথিবী মানে যে, ভারত ওই যাত্রায় সামলে উঠেছিল যথেষ্ট কৃতিত্বের সঙ্গে। কথাটা উঠছে এই কারণে যে, ২০২০-র ১৮ সেপ্টেম্বর একদিনে মৃত্যু হয়েছিল ১,২৪৭ জনের। তখনও মৃত্যুর সাপ্তাহিক গড় ছিল ১,১৬৪ জন। সেই সংখ্যাটাই ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১-এ নেমে এসেছিল মাত্র ১০৬-এ। বিশেষজ্ঞরা ধরছেন যে, দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে গত মার্চে। বিপদ বহুগুণ হয়েছে এই পর্বে এসে। উদাহরণ, মে মাসের ১৮ তারিখের দিকে চোখ রাখুন—ওই একদিনে ৪,৫২৯ জনের প্রাণ চলে গিয়েছে কোভিডে। ওই সময়ের সাতদিনের গড়টাও ওই সংখ্যার কাছাকাছি—৪,১৫০। তার মানে দৈনিক চার থেকে সাড়ে চার হাজার মানুষকে অকালে চিরবিদায় নিতে হয়েছে। চতুর্দিকে পূর্ণ/আংশিক লকডাউন করে সম্প্রতি সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কিছুটা কমানো গিয়েছে। তাও ৬ জুন সারা ভারতে মারা গিয়েছেন ২,৪২৭ জন। মঙ্গলবার সাতদিনের গড় ছিল আরও বেশি—২,৮৬৯। দুই ঢেউ মিলিয়ে সারা দেশে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হলেন, প্রাণ গিয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ নানা বয়সি মানুষের। প্রথম ঢেউ মোকাবিলার সাফল্য ধরে রাখার ব্যর্থতা এবং যথাসময়ে সকলকে টিকা দিতে না-পারার বাস্তবকেই এজন্য বহুলাংশে দায়ী করতে হয়। তার মাশুল নাগরিকরা গুনছেন আরও নানাভাবে। ছোট ছোট উজ্জ্বল ছেলেমেয়েদেরকে যেন সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। গতবছর পরীক্ষা শেষ হয়েছিল দায়সারাভাবে। এবার সারা দেশের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বেশিরভাগ বোর্ড পরীক্ষা বাতিল হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। লক্ষ লক্ষ বেকার যবুক-যুবতী তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন। তাঁদের চাকরির পরীক্ষা নেওয়াই হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের পরীক্ষাগুলোর ভবিষ্যৎও খুব ভালো ঠেকছে না।
যে-দেশ ভ্যাকসিন উৎপাদনে দীর্ঘদিন যাবৎ নেতৃস্থানীয় বলে গণ্য হয় এবং যে-দেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকের কোনও অভাব নেই, সেই দেশের এই ক্ষতি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা ছিল অবশ্যই একটা ‘আত্মঘাতী’ নীতি। অনেকটা দেরিতে হলেও মোদিবাবুর চৈতন্যোদয় হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটা দেশবাসীর একটা বড় জয়ের সূচনা। তবে, সার্থক করার জন্য এখনও অনেকটা পথ পেরতে হবে। শুধু মৌখিক ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহটাও নিশ্চিত করতে হবে। না-হলে রাজ্যগুলি সুন্দর পরিকাঠামো সাজিয়ে রেখেও মানুষের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে হতাশ হবে। এবার ভারতেশ্বরের কথা রাখার পালা। নরেন্দ্র মোদি ভাঙলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু মচকালেন কি? আমরা, দেশবাসী কী মনে করছি সেটা বড় কথা নয়, মোদিবাবু হাবেভাবে কিন্তু বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি মচকাননি। তাহলে এত বড় ক্ষতির দায়টাও তিনি এই লপ্তে স্বীকার করে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতেন। আসলে তাঁর মতো রাজাকে যে মচকাতে নেই!