বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
তারপরেও তাঁর চাকরির শেষদিনে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে হঠাৎ তলব করা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে বলা হয়েছে, এই চিঠি পাওয়ামাত্র রাজ্য সরকার যেন আলাপনবাবুকে মুখ্যসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। আজ, সোমবার (৩১ মে) সকাল ১০টার মধ্যে আলাপনবাবুকে নর্থ ব্লকে পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং ডিপার্টমেন্টে রিপোর্ট করতে হবে। মোদি সরকার তার এই সিদ্ধান্ত যেদিন বদল করল সেটা তাৎপর্যপূর্ণ—২৮ মে, শুক্রবার। সেদিন কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বৈঠক নিয়ে জোর রাজনৈতিক তরজা বাধে। প্রধানমন্ত্রীকে সেদিন স্বাগত জানাতে মুখ্যসচিব যাননি এবং প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন আলাপনবাবু। শোনা যায়, এটাকেই ‘গুরুতর অপরাধ’ গণ্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই মোদি দিল্লি ফেরামাত্রই বসে ক্যাবিনেট নিয়োগ কমিটির বৈঠক। আলাপনবাবুর অনুমোদিত এক্সটেনশন বাতিল করে তাঁকে দিল্লিতে ফেরানোর সিদ্ধান্ত সেখানেই চূড়ান্ত হয়।
মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অন্যায্য। তাদের বিচার করা উচিত, কোন জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। একটি সরকারি বৈঠকে মুখ দেখানোর চেয়ে দুর্গত মানুষের পাশে সরাসরি গিয়ে দাঁড়ানোকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী কোনও ভুল করেননি। তার উপর এই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানবিক দাবি পেশের বাস্তব মূল্য যে কিছুমাত্র নেই উম-পুনের পর বাংলার পুনর্গঠনে মোদি সরকারের শীতল ভূমিকাই তার সাক্ষ্য দেয়। আরও একটি কথা হল, শুক্রবারের বৈঠকটিকে বাস্তবে পিএম-সিএম মিটিংয়ের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। সেখানে বড় হয়ে উঠেছিল প্রধানমন্ত্রীর দলের বাংলার দু’-একজন নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা। মোদিবাবুরা এটাকেই সংসদীয় রাজনীতির সহবত হিসেবে পালন করেন এমন কিন্তু নয়। গুজরাত, বিহার প্রভৃতি বিজেপি-শাসিত রাজ্যে কংগ্রেস বা আরজেডি’কে প্রাপ্য মর্যাদা তাঁরা মোটেই দেন না। আসলে সবটাই তাঁদের প্রভুত্ববাদী মানসিকতা। মোদিবাবুরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকার হল ‘মনিব’ আর রাজ্যগুলি তাঁদের অধীন তুচ্ছ ‘প্রজা’। মোদিবাবুরা যখন যা হুকুম করবেন রাজ্যগুলি তা শুনতে, মানতে বাধ্য! এই সরকারের একের পর এক সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যে ক্ষতি হয়েছে ভারতে তার দৃষ্টান্ত নেই। সিবিআই থেকে নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি স্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির মর্যাদা তারা আগেই ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো কয়েকটি ঋজুশির রাজ্য সরকারকে এখনও তাঁবে আনতে পারেননি মোদি। সেই প্রতিহিংসার জ্বালায় দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। এই স্বৈরাচার মেনে নিলে সেটা হবে আর একটি অন্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনে দেশজুড়ে নেতৃত্ব দেওয়া এবং আইনের দরবারে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা। এটা নিছক মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের ব্যক্তিগত জয়-পরাজয়ের বিষয় নয়। এর সঙ্গে বাংলার সম্মান এবং ভারতের গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ জড়িয়ে গিয়েছে।