পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
ওই সময় দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শুরু করেন ‘মহামারী মোকাবিলায় ভারতের অভূতপূর্ব সাফল্যের’ ফিরিস্তি দিয়ে। নরেন্দ্র মোদি উল্লেখ করেন টিকাকরণে ‘স্বনির্ভর’ ভারতের রেকর্ড এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্রের ভূমিকার কথা। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে আরও দাবি করা হয়, করোনায় মৃত্যুহার বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম। তরুণ প্রজন্মের ক্ষতি ভারতেই সবচেয়ে কম হয়েছে। কেন্দ্রীয় শাসক দল এবং মোদি সরকারের কেউ কেউ এমনও দাবি করেন, সারা পৃথিবী আজ শিখে নিক করোনার মোকাবিলা কী করে করতে হয়। গত ৮ অক্টোবর কানাডায় অনুষ্ঠিত ‘অ্যানুয়াল ইনভেস্ট ইন্ডিয়া’ ভার্চুয়াল কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদি দাবি করেন, ‘ভারত সারা পৃথিবীর ঔষধালয়ের’ ভূমিকা পালন করছে। আমরা মোটামুটি দেড়শোটি দেশকে ওষুধের জোগান দিয়েছি। গত ৭ মার্চ ‘জন ঔষধি দিবস’ উদযাপনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে মোদি ফের পুনরাবৃত্তি করেন, ভারতই পৃথিবীর ঔষধালয়ের রূপ নিয়েছে। করোনা মহামারীর পরই সারা পৃথিবী ভারতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতিতেই ভারত সারা বিশ্বের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
একজন ভারতবাসী এসব শুনতে এবং ভাবতে ভালোবাসবেন, গর্ববোধ করবেন নিশ্চয়। কিন্তু বাস্তবটা যে আদৌ তা নয়, সেটা জানেন ভুক্তভোগীরা। করোনার যন্ত্রণা প্রায় প্রতিটি নাগরিককে এমনভাবে বিঁধছে, সেই অর্থে ভুক্তভোগী আজ সকলেই। হয় তিনি নিজে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। অথবা, করোনায় এক বা একাধিক বার ভুগেছেন তাঁর পরিবারের সকলে। কিংবা, এক বা একাধিক বন্ধুকে, প্রিয়-পরিজনকে হারিয়েছেন কেউ কেউ। একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে চরম বিপন্ন হয়ে পড়েছেন হাজার মানুষ অথবা পরিবার। পরিবার এবং সমাজের আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়ার ব্যাপারটা এর পাশে যেন অনেক ছোট মনে হয় ইদানীং! বৎসরাধিককাল সময় মিলেছিল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা যেত। সকলকে ভ্যাকসিনও দেওয়া যেত দ্রুত। তাহলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। বিশেষজ্ঞরা সেরকমই বলছেন। ভারতই পৃথিবীর বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক দেশ। বহু দেশকে ভ্যাকসিন সাপ্লাইও করেছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে দেশবাসী। বিশেষ করে গরিব ভারতবাসী। বাজেটে ৩৫ হাজার কোটি টাকার সংস্থান এবং পিএম কেয়ার্স নামক ফান্ড তৈরি হওয়ার পরেও। আসলে নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং এবং তাঁর সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক কাজ করার চেয়ে ভাষণেই বেশি ওস্তাদ। ভারতের বিপদ এটাই। আজ, কলকাতা রাজভবনে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়তে চলেছেন বাংলার জননেত্রী। ২ মে রাজ্য বিধানসভার ভোটের ফলাফল প্রকাশের দিনই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকারের অভিমুখ কী হতে চলেছে। কোন কাজটা এই মুহূর্তের অগ্রাধিকার পাচ্ছে তাঁর কাছে। করোনা মোকাবিলা এবং বাংলাসহ সারা ভারতের সব মানুষকে বিনা পয়সায় টিকাকরণই তাঁর এক ও একমাত্র লক্ষ্য। যে কাজটা মোদি এবং তাঁর পার্ষদরা করলেন না, সেটাই করার দায়িত্ব নেবেন মমতা। প্রয়োজনে তিনি অহিংস আন্দোলনেও নামবেন বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন। জয় হোক তাঁর মানবিক মুখের। তাঁর বিবেকের পথ ধরে ভারতের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক রাজধর্ম পালনের যাথার্থ্য।