গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
তার মধ্যেও এমাসের গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিমহল আশার কথাই শুনিয়েছিল। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) বলেছিল, ২০২১ ক্যালেন্ডার বর্ষে ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধি হতে চলেছে সাড়ে ১২ শতাংশ। তার ক’দিন আগে বিশ্ব ব্যাঙ্কও ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে তাদের পুরনো অবস্থান পাল্টেছিল। পূর্বানুমান ৪ পয়েন্ট বাড়িয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক সর্বশেষ বলেছে, বৃদ্ধির হার এবছর সাড়ে ১০ শতাংশ হবে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আইএমএফের বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক রিপোর্টের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এবছর ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) হার চীনের থেকেও বেশি হবে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বৃদ্ধির হার হবে ৮.৬ শতাংশ। সেখানে ১২.৫ শতাংশ হবে ভারতের বৃদ্ধির হার। মনে রাখতে হবে, আইএমএফের হিসেব অনুসারে, গতবছর ভারতে জিডিপির রেকর্ড সঙ্কোচন হয়েছিল। সঙ্কোচনের হার ছিল ৮ শতাংশ। চার সপ্তাহ আগে আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথের বক্তব্য ছিল, আন্তর্জাতিক মহলের আশঙ্কার সবটা সত্যি হবে না। পৃথিবী অনেক দ্রুত সেরে উঠছে। এবার আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের আশ্বাসেরই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এডিবি) পূর্বাভাসে। এডিবির বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ভারতের অর্থনীতি কয়েক মাসের ভিতরেই স্বাভাবিক গতি নেবে। চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে অন্তত ১১ শতাংশ। এই আশার কথা শোনানো হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২১-এ।
আশার কথা সবসময়ই আশাপ্রদ। সেরে ওঠার আশা অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সেটাই সব নয়। এতে খুব বেশি আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে, উপর্যুক্ত তিন আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বানুমান কিছু শর্তনির্ভর। তার মধ্যে প্রধান শর্তটা হল, ভয়ানক করোনা পরিস্থিতি থেকে দেশকে দ্রুত বের করে আনতে হবে। লকডাউনের অভিশাপ নেমে না-আসে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের ক্ষেত্রে প্রাদেশিক এবং আঞ্চলিক বৈষম্য মারাত্মক। সেটা দূর করতে হবে। তার জন্য দরকার দু’টো জিনিস। সবার জন্য চিকিৎসা এবং টিকাকরণ। কিন্তু অক্সিজেন এবং জীবনদায়ী ওষুধের সঙ্কট থেকে বেডের হাহাকারের ছবিটা মহান ভারতের জনস্বাস্থ্যব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারাই প্রকট করে দিয়েছে। টিকাকরণের সাড়ে তিনমাসের ছবিটাও যার-পর-নাই চরম হতাশার। যে-কোনও জনগোষ্ঠীর প্রধান সম্পদ তার যুবশ্রেণি। ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণের কার্যক্রম শুরু করার আগেই ধরা পড়েছে তার অপটুতার নানা দিক। এখনও সময় আছে, সরকারকে আন্তরিকভাবে সকলের টিকাকরণের দিকটি নিশ্চিত করতেই হবে। গয়ং গচ্ছ ভাব আর বরদাস্ত করা নয়। এই অত্যন্ত জরুরি কাজটি করতে হবে যাকে বলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। দেখতে হবে, পয়সার অভাবে কিংবা অজ্ঞতার কারণে একজনও যেন বাদ না পড়েন। এই চোদ্দো মাসের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার জনস্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলার অঙ্গীকার নিক। প্রয়োজনে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের বরাদ্দ ছেঁটে এই খাতে লগ্নি বৃদ্ধি করুক সরকার। দীর্ঘমেয়াদে গোটা জাতিই এর সুফল ভোগ করবে। সারা পৃথিবীর কাছে উজ্জ্বল হবে ভারতের মুখ। একজন সৎ ভারতীয় নাগরিকের গোটা জীবন এরই প্রতীক্ষায় কেটে যায়।