বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে কুম্ভমেলা আয়োজনের গর্বের মধ্যেই বিজেপি নেতৃত্বের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার সত্যটি প্রকাশ পেয়েছিল। দেশজুড়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল মানুষ। বিঁধেছিল বিজেপি-শাসিত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে। অস্বস্তি কাটাতে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন কুম্ভমেলায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের উপর। অথচ, একই ব্যক্তি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে বাহু ফুলিয়েছেন এই বাংলার আসানসোলে বিজেপির নির্বাচনী জনসভায় ‘বিপুল’ লোকসমাগম নিয়ে। শুধু আসানসোল নয়, কলকাতাসহ রাজ্যের প্রতিটি শহরে এবং জেলাগুলির নানা স্থানে এইভাবে প্রতিযোগিতা চলেছে লোক জড়ো করার। বলা বাহুল্য, কোনও সভাতেই সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা হয়নি। মাস্ক পরা মানুষ দেখা গিয়েছে নগণ্য সংখ্যায়। দর্শক-শ্রোতাদের কথা না-হয় বাদ দেওয়া গেল, মঞ্চ আলো করে থাকা সব রাজনৈতিক নেতা ও বক্তার মুখেও মাস্ক নেই। কেউ কেউ খুব কাছাকাছি বসে কিংবা অন্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কথা বলছেন! বিভিন্ন দফায় ভোটের দিনেও দেখা গিয়েছে কোনও কোনও প্রার্থী মাস্ক ছাড়াই বুথে বুথে ঘুরছেন! অথচ প্রত্যাশা ছিল উল্টোটাই—মানুষকে সচেতন করার মূল দায়িত্বটা রাজনৈতিক নেতারাই পালন করবেন। কারণ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন তাঁদের ভিতর থেকেই। তাঁরাই আইনসভার সদস্য। আইনপ্রণয়ন এবং সংশোধনের একমাত্র অধিকারী তাঁরাই।
দুর্ভাগ্য যে, বাস্তবে তাঁদেরই বিপরীত ভূমিকায় পেল দেশ! এর ভিতরে নতুন করে বিপদের আঁচ পান সচেতন নাগরিকরা। সবক’টি সোশ্যাল মিডিয়ায় নাগরিকদের সতর্কবার্তা লক্ষ করা গিয়েছে। তাতে সুশীল সমাজেরও সমর্থন ছিল। শুধু কর্ণপাত করেননি ক্ষমতার কারবারিরা। কেন্দ্রে এবং বেশিরভাগ রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে যে বিজেপি তারা এই পাপের দায় অস্বীকার করতে পারে না। এরাজ্যে নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে অনেকদিন হল। তাদের সামনে টি এন সেশনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির অনাচার বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়নি। গতে বাঁধা কিছু কাগুজে নির্দেশিকা জারি করেই দায়মুক্ত হতে চেয়েছে। বিভিন্ন জনস্বার্থ মামলার বিচার করতে বসে সাতটি হাইকোর্ট করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিশনকে ভর্ৎসনাই করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। অন্যদিকে, মোদি সরকারের উপর খড়্গহস্ত সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে, সরকারের ব্যর্থতার কারণে দেশে আজ জাতীয় জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সবার শেষে ঘুম ভেঙেছে কমিশনের। বৃহস্পতিবার পদযাত্রা, রোড-শো, সাইকেল-বাইক র্যালি প্রভৃতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। কমিশনের নির্দেশ, জনসভায় পাঁচশোজনের বেশি জমায়েত চলবে না। কোভিড বিবিধও মানতে হবে। দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে, এই অনিবার্য নির্দেশ জারির জন্য বিপুল ক্ষমতার অধিকারী কমিশন এতটা বিলম্ব করল কেন? কেন কোর্টের তর্জনী দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল তাদের? তারা কি মোদি এবং তাঁর পার্টির মর্জি নিয়ে গবেষণা করছিল? সরকার একবছরের অধিক সময় পেয়েও দেশবাসীকে বাঁচাবার গ্যারান্টি দিতে ব্যর্থ হল। সঙ্কীর্ণ রাজনীতিতে সরকারের মনোনিবেশই এর জন্য দায়ী। অতএব মোদি সরকারের ইমেজ বলে কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই। এমন সরকারের পোঁ ধরেই ভাবমূর্তি খোয়ালেন টি এন সেশনের উত্তসূরিরাও। এতে দেশবাসীর এবং গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হল তা অপরিমেয়। ইতিহাসে তাদের জন্য কোনও ক্ষমা লেখা থাকবে না।