পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না বলে প্রথম দফা থেকেই অভিযোগ ওঠে। এই বিশাল ভারতের এখনও পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি ৭০ লক্ষ নাগরিকের দু’টি ডোজের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষ একটি ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার প্রতীক্ষায় আছেন। অথচ সরকার জুলাই মাসের ভিতরে ২৫ কোটি মানুষের টিকাকরণ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে দিয়েছে। ভারত সরকার এই ঘোষণার সময় গর্ব করে বলেছিল যে, ভারতেই সবচেয়ে দ্রুত টিকাকরণ চলছে। এই প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকেও পিছনে ফেলে এগচ্ছে ভারত। কিন্তু তার অল্পদিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গসহ ছয়টি রাজ্যে ভ্যাকসিনের জোগানে ঘাটতি লক্ষ করা যায়। যার জন্য এই রাজ্যগুলি ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে এগতে বাধ্য হয়। সেকেন্ড ওয়েভ মারাত্মক আকার নেওয়ার মধ্যে এই দুঃসংবাদে রাজ্যে রাজ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। সঙ্কটের একটা কারণ হয়তো, ভারতকে বহু দেশে ভ্যাকসিন পাঠাতে হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছে ভারত। সঙ্কটের এটাই একমাত্র কারণ নয়। সরকার লক্ষ করেছে, অনেক রাজ্যে ব্যাপক হারে টিকা নষ্ট হচ্ছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে সম্প্রতি এক সমাজকর্মীকে সরকার জানিয়েছে—হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত প্রভৃতি ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যেও বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে। বিজেপি কিংবা এনডিএ শাসিত একাধিক রাজ্যে করোনার চিকিৎসা বস্তুত বিশ বাঁও জলে। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া প্রভৃতি রাজ্যেও টিকা নষ্ট হয়েছে প্রচুর পরিমাণে! সারা দেশে টিকার অপচয়ের গড় হার সাড়ে ৬ শতাংশ। সেটাও স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ৪৪ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে। দুর্বল ব্যবস্থাপনা কিংবা কারও কারও গাফিলতির জন্যই মহার্ঘ এই ভ্যাকসিনের বিপুল পরিমাণ ডোজ রোজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে না, বহু মানুষকেও টিকাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা শুধু অনৈতিক নয়, অপরাধও বটে। এই উদ্বেগজনক প্রবণতার দিক থেকে সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম রাজ্যটির নাম পশ্চিমবঙ্গ। সঙ্গে রয়েছে কেরল।
সারা দেশের উচিত, বাংলার কাছ থেকে ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্টের শিক্ষা নেওয়া। শেখা উচিত মোদি সরকারেরও। ১ মে থেকে তৃতীয় দফায় শুরু হচ্ছে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলের টিকাকরণ কর্মসূচি। এ এক বিরাট লক্ষ্যমাত্রা। এই লক্ষ্যপূরণে নিশ্চিত সাফল্য চাইলে বাংলাকে আরও বেশি করে অনুসরণ করা প্রয়োজন। দেশের এই ভয়ানক সঙ্কটের দিনে কারও কোনও ইগো থাকা উচিত নয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার দিন আজ। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন বটে, কিন্তু তা একেবারেই দিশাহীন। তিনি লকডাউন এড়ানোর মৌখিক বার্তাই দিয়েছেন শুধু, কিন্তু সেই চেনা সর্বনাশ শেষমেশ কীভাবে এড়ানো সম্ভব হবে তা জানাননি। দেশের মানুষের স্বার্থে, অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনে প্রধামন্ত্রীর উচিত, এবার অন্তত সংঘাতের রাস্তা ছেড়ে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের নীতিকে মান্যতা দেওয়া।