বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যথারীতি সে-পথে হাঁটেননি। এমএসএমই-সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত ক্ষেত্রে ফিসকাল স্টিমুলাস এবং গরিব মানুষের হাতে নগদের জোগান বৃদ্ধির পরামর্শ যেমন মানেনি, সেই ট্র্যাডিশন অনুসারে সরকার খারিজ করে দিয়েছিল সকলকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার দাবি। চলতি বছরের জন্য বাজেট ঘোষণায় ভ্যাকসিনের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা সত্ত্বেও মোদি সরকার এই ন্যায্য দাবিটি অগ্রাহ্য করেছে। কেন্দ্রের এই অমানবিক মুখ দেখার পর কথা বাড়াননি মমতা। তিনি বলেছিলেন, রাজ্যগুলিকে তার প্রয়োজনমতো ভ্যাকসিনে কেনার অনুমতি ও স্বাধীনতা দেওয়া হোক। ১ মার্চ থেকে শুরু হয় ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য টিকাকরণ। তার পরের ধাপে চালু হয় ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যেসব নাগরিকের কিছু জটিল অসুখ রয়েছে (কোমরবিড) তাঁদের টিকাকরণ। ভ্যাকসিন প্রদানে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছিল ২৭ কোটি নাগরিককে। জুলাইয়ের ভিতরে সরকার ২৫ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে। ধাপে ধাপে টিকাকরণ শুরু হলেও কোনও ক্ষেত্রেই সরকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এমনকী ভ্যাকসিনের সঙ্কটে কয়েকটি রাজ্যে টিকাকরণ বেশ বিলম্বিত হয়ে যায়। এনিয়ে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসে এবং দেশজুড়ে সমালোচনার বন্যা বইতে থাকে। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ লাগামছাড়া হতেই দেশজুড়ে ত্রাহি মধুসূদন রব উঠে গিয়েছে।
প্রথম দফার করোনায় ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে ভারতের স্থান ছিল তৃতীয়—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের নীচে। সেকেন্ড ওয়েভে ভারতে দৈনিক সংক্রমণের হার এখন পৌনে তিন লক্ষ এবং মৃত্যু ২ হাজারের পথে! দ্বিতীয় দফায় ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে ভারতের স্থান এক নম্বরে! এই পরিস্থিতির জন্য ভোটের অকারণ লম্বা নির্ঘণ্ট এবং কুম্ভমেলা আয়োজনের ত্রুটিকে অনেকাংশে দায়ী করা যায়। আর দায়ী করতে হয়, যথেষ্ট সময় পেয়েও সকলের টিকাকরণের ব্যর্থতাকে। এর দায় কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার কোনওভাবেই অস্বীকার করতে পারে না। যখন গোটা দেশ ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া, আইএমএফ-সহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষ আশা প্রকাশ করছে, তখন এই ব্যর্থতার চিত্র ভারতবাসীকে নতুনভাবে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। এখন একটাই রাস্তা খোলা—সবার দ্রুত টিকাকরণ। উৎপাদকরা ৫০ শতাংশ ভ্যাকসিন কেন্দ্রকে দেবে। বাকি ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলিকে এবং খোলা বাজারে তারা বেচতে পারবে। কেন্দ্র অবশেষে এমনই বন্দোবস্ত করেছে। এটা মন্দের ভালো। কিন্তু সমস্যা হল, মোদি সরকার ভালো ভালো অনেক কিছুই বলে থাকে। কথা রাখে না। নানা ক্ষেত্রে কথা না-রাখার ব্যাপারে তারা ইতিমধ্যেই রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। ভয়টা সেখানেই। ভ্যাকসিনের জোগান দ্রুত বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আরও বেশি সংখ্যক দেশীয় সংস্থাকে করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুত এবং বিক্রির করার অনুমতি দিতে হবে। মোদ্দা কথা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকলের টিকাকরণ নিশ্চিত করতেই হবে। ভারত একটি যোগ্য দেশ। সরকার এটা অবশ্যই পারবে। তার জন্য দরকার একটাই জিনিস—নিন্দনীয় ট্র্যাডিশন ভেঙে বেরিয়ে আসতে রাজি থাকতে হবে মোদিবাবুকে।