কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কম্পিটিশনের মার্কেটে রাশিয়া প্রথম টিকাকরণের কীর্তি জাহির করতেই নড়েচড়ে বসেন নরেন্দ্র মোদি। অল্পদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দেন ভারতেও টিকাকরণের শুভ সূচনা হতে চলেছে। ১ মার্চ থেকে শুরু হয় ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণ। তার পরের ধাপে চালু হয় ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যেসব নাগরিকের কিছু জটিল অসুখ রয়েছে (কোমরবিড) তাঁদের টিকাকরণ। ভ্যাকসিন প্রদানে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয় ২৭ কোটি নাগরিককে। জুলাইয়ের ভিতরে সরকার ২৫ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধাপে ধাপে টিকাকরণ শুরু হলেও কোনও ক্ষেত্রেই সরকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। ৮৫ দিনে ১০ কোটি ডোজ টিকাকরণের পরেও এই কথা বলতে হচ্ছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়, ভ্যাকসিনের বিপুল পরিমাণ ডোজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং হচ্ছে। মহার্ঘ ভ্যাকসিন ডোজের অপচয় রোধ করতে না-পারাটা একটা বিরাট ব্যর্থতা। এতে শুধু অর্থেরই অপচয় হচ্ছে না, বহু মানুষও টিকাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সন্দেহ হয় সরকার মনে রেখেছে কি না, এ-পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লক্ষাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ১ লক্ষ ৬৭ হাজার নরনারীর প্রাণও গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে ভারতের স্থান তৃতীয়। সেকেন্ড ওয়েভে ভারতে দৈনিক সংক্রমণের হার দেড় লক্ষ এবং মৃত্যু ৮০০ অতিক্রম করে গিয়েছে! এই তথ্য আমাদের মন খারাপ করে দেয়। যখন গোটা দেশ ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া, আইএমএফ-সহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষ আশা প্রকাশ করছে, তখন এই ব্যর্থতার চিত্র নতুন করে ভাবাচ্ছে।
আরও খারাপ খবর হল, পশ্চিমবঙ্গসহ হাফ ডজন রাজ্যে তাদের প্রয়োজন মতো ভ্যাকসিনের জোগান দিতে পারছে না কেন্দ্র। সপ্তাহখানেক আগেও কেন্দ্র বাংলায় ২০-২৫ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। সম্প্রতি কয়েক দিন হল, ভ্যাকসিনের সাপ্লাই অনেক কমে গিয়েছে। যেমন বুধবার মোটে ৫ লক্ষ ডোজ এসেছে। তার অনিবার্য ফল হয়েছে এই, বৃহস্পতিবার অনেক সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশে টিকাকরণ বন্ধ রেখেছে কিছু বেসরকারি হাসপাতালও। সোজা কথায়, পর্যাপ্ত জোগানের অভাবেই ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে বাধ্য হয়েছে কিছু রাজ্য। যদিও মোদি সরকারের দাবি, ভ্যাকসিনের কোনও ক্রাইসিস নেই। তাদের স্টকে এখনই ৪ কোটি ডোজ মজুদ আছে। প্রয়োজন মতো উৎপাদনও চলছে। কিন্তু যে-সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার ব্যাপারটাকে একটা মস্ত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, তার মুখের কথায় বিশ্বাস কী! বাস্তব যে অন্য কথা বলছে। মোদিবাবুরা মনে রাখুন, এদেশে অত্যন্ত গরিব মানুষের সংখ্যা ৫০ কোটির বেশি। নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থাও কাহিল। মধ্যবিত্ত শ্রেণি বস্তুত হারিয়েই গিয়েছে। তাই বাংলার সবার জন্য বিনা পয়সায় টিকাকরণের ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের অসহযোগিতার কারণেই সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। মোদিবাবুদের উচিত, মমতার দাবি মেনে নিয়ে অতি দ্রুত সারা ভারতের সকলের টিকাকরণ নিশ্চিত করা। ৪৫ বছরের নীচেই সবচেয়ে বেশি মানুষ। তারাই মোট জনসংখ্যার ৭৭ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় ওয়েভ থেকে সকলকেই বাঁচানোর ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ করতে হবে সরকারকে। বিশেষ সহায়ক হতে পারে প্রথম দফার অভিজ্ঞতা। সরকার এই দফাতেও ব্যর্থতার পরিচয় দিলে দেশকে তার জন্য অপরিমেয় মূল্য চোকাতে হবে। সেই অপরাধ হবে ক্ষমাহীন।