বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
কিন্তু ব্যথা একটাই রয়ে গিয়েছে মোদি এবং তাঁর পার্টির বুকে। সব তো হল, বাংলার ক্ষমতা যে অধরা। অথচ, বিজেপির (জনসঙ্ঘের সূত্রে) প্রতিষ্ঠাতা-পুরুষ এক বঙ্গসন্তান, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটিও শ্যামপ্রসাদের সৃষ্টি (পাকিস্তানের নিশ্চিত গ্রাস থেকে ছিনিয়ে আনা) বলে দাবি করে তারা। আর সেই রাজ্যেই ব্রাত্য বিজেপি। বিজেপি বাংলায় ক্ষমতার স্বাদ পেল না। ব্যথাদীর্ণ বুক থেকে এই শেল উপড়ে ফেলার জন্য তাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদি এবং তাঁর ডানহাত অমিত শাহ। কিন্তু প্রতিপক্ষের নাম যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! সারা দেশ তাঁকে ‘বাংলার বাঘিনী’ নামেই চেনে। তাঁকে তো আর পাঁচজনের মতো বধ করা সম্ভব নয়। তিনি একেবারে অন্য ধাতুতে গড়া। অতএব বাংলার জন্য গোটা পার্টিকে বাজি রেখেছেন মোদি-শাহ। গত লোকসভার ভোটের থেকেই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মোদিরা যে সত্যটি উপেক্ষা করলেন তা হল—মমতার ক্ষমতার ভিত্তি শুধু মানুষ। তাঁর ভিত নাড়াতে গেলে বিজেপিকেও পাল্টা মজবুত সংগঠন গড়তে হতো। মানুষের অভাব অভিযোগ দাবি নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হতো। দিনের পর দিন। ক্লান্তিহীনভাবে। যেমনটা মমতা করেছেন কয়েক দশক যাবৎ। কিন্তু না, বিজেপি সে-পথে হাঁটল না। সস্তায় বাজিমাত করার রাস্তায় গেল। মমতা কর্তৃক বাতিল কিছু নেতা ক্রয়ে মনোনিবেশ করল। আর এসব করতে গিয়েই বোধহয় তারা দেশের বাকি দিকে তাকাতে ভুলে গেল। অন্যান্য রাজ্যে দুর্বল হয়ে পড়ল বিজেপি। রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়ে ক্ষমতা পুনর্দখল করতে পারল না। ক্যাচ মিস করল মহারাষ্ট্রে। পাঞ্জাব চলে গিয়েছে গ্রিপের বাইরে। বিজেপির আদর্শ ও উন্নয়নের কঙ্কাল উত্তর-পূর্ব ভারতেও বেরিয়ে পড়ার জোগাড়। পরবর্তী লোকসভার ভোট তিনবছর দূরে হলেও এই ট্রেন্ড চিন্তায় রেখেছে মোদি-শাহকে। অনুমান করা যায়, এজন্যই এবার বাংলা দখলের জন্য বিজেপির উপর চাপটা অনেক বেশি। যে-কোনও উপায়ে বাংলা দখলের হুলিয়া তারা জারি করেছে। তার জন্য ভয়ানক নীচে নামতেও যে তাদের আপত্তি নেই, সেও তারা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
ভোটের আগে থেকেই বিজেপির একাধিক নেতা বিরোধীদের গুলি মেরে খতম করারও হুমকি দিচ্ছিল। জারি ছিল নানারকম নির্মম উস্কানি। শীতলকুচির বুথে সত্যি সত্যি চারজন নিরীহ নাগরিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর অবশ্য বিজেপি বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে। দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে নিন্দার ঝড়। ড্যামেজ কন্ট্রোল করতেও তারা যে-পথে এখন, তা নির্ভেজাল মিথ্যের বেসাতি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আত্মরক্ষার তত্ত্বে সিলমোহর দিতে এক রক্তাক্ত জওয়ানের ফেক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন বিজেপির এক এমপি। অবশ্য বিজেপির ভাণ্ডা ফোঁড় হতে দেরি হয়নি। সারা দেশ জেনে গিয়েছে খুনি জওয়ানদের হয়ে দালালি করতে যে সামান্য বুদ্ধিসুদ্ধি প্রয়োজন, তা বিজেপির আইটি ফ্যাক্টরির নেই। মোদি-শাহদের বোঝা উচিত, এইভাবে বাংলা দখল করা যায় না। সাম্প্রতিক সীমাহীন নষ্টামিতে শুধু তাঁদের পার্টির ক্ষতি হচ্ছে না, সামগ্রিকভাবে রাজনীতিই কলঙ্কিত হচ্ছে। দেশের এবং গণতন্ত্রের পক্ষে এই ক্ষতি অপূরণীয়।