বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
নীতির রাজনীতির ‘সোল এজেন্ট’ হিসেবে আসরে অবতীর্ণ হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ির বিজেপি। বাজপেয়ি মিষ্টি মিষ্টি কথা আর কাব্য শুনিয়ে বিদায় নেন। অবশেষে এসেছেন তাঁরই প্রতিনিধি নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ সালে তিনিও ভারতবাসীর মন ভিজিয়েছিলেন কালো টাকার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে। মোদি এবং তাঁর তৎকালীন ডানহাত অরুণ জেটলি দেশবাসীকে কথা দিয়েছিলেন, বিদেশে ভারতীয়দের কালো টাকার যে পাহাড় রয়েছে সেসব তাঁরা উদ্ধার করে আনবেন। অতঃপর প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করে দেবে মোদি সরকার! কিন্তু দেশবাসী গত সাত বছরে ১৫ পয়সাও পায়নি। উল্টে, কর্পোরেট তোষণকারী অর্থনীতির সৌজন্যে প্রত্যেক নাগরিকের আয় ক্রমশ নিম্নমুখী হয়েছে এবং মাথায় চেপে গিয়েছে বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা। ধনী আরও ধনী হয়েছে। বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকা আলো করে রয়েছেন বেশকিছু ভারতীয় ধনকুবের। অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি হারিয়ে যাচ্ছে। গরিবের সংজ্ঞাভুক্ত হয়ে যাচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণি। গরিব চলে যাচ্ছে দারিদ্রসীমার নীচে। দেশজুড়ে বিপিএল কার্ডের ক্রমবর্ধমান চাহিদাই এর অকাট্য প্রমাণ। এই সিস্টেমের প্রধান বেনিফিসিয়ারি যারা তারা কি বেইমানি করতে পারে! না। তারা এই সিস্টেমকে বাঁচিয়ে রাখতে মরিয়া। এই সিস্টেমকে তারা আরও চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে অনুমান করা যায়। ভোট বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরে বলছেন, কায়েমি স্বার্থের হকদাররাই তাদের প্রতিনিধিদের জেতাতে জান লড়িয়ে দিয়ে থাকে। পছন্দের দলের পক্ষে মিথ্যে প্রচার চালাতে, কিছু ভোটারকে কিনতে এবং পরে ঘোড়া (এমএলএ/এমপি) কেনাবেচা চালাতে তারা অপরিমেয় টাকা লগ্নি করে।
এসব বাগে রাখতে খাতাকলমে কিছু সরকারি ব্যবস্থা অবশ্য আছে। যেমন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি) কালো টাকা উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়, পুরস্কার ঘোষণা করে ইত্যাদি। নগদ টাকার লেনদেনের উপরে নির্বাচন কমিশনও কিছু কড়াকড়ি করে। আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ার পর নগদ অর্থের সঞ্চয়, চলাচল ও লেনদেনের ব্যাপারে একটা লক্ষ্মণরেখাও এঁকে দেয় তারা। লঙ্ঘন করলেই তারা বাজেয়াপ্ত করে টাকা। কমিশনের নির্দেশে নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা এবং পরিমাণও প্রতি বছর বাড়ছে। কিন্তু তাতেও কি কালো টাকার কারবারিদের একটুও ভয় ধরানো গিয়েছে? মনে হয় না। সম্প্রতি রায়দিঘিতে মোদির জনসভা থেকে ১০০০ টাকার কুপন বিলি করা হয়েছে বলে তৃণমূলের তরফে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ, জনসভায় লোক টানতে এবং টাকার বিনিময়ে ভোট কিনতেই এই অনাচার করা হচ্ছে। (‘বর্তমান’ অবশ্য এই কুপনের সত্যাসত্য যাচাই করেনি।) বিজেপিও যথারীতি অস্বীকার করেছে এই অভিযোগ। কিন্তু ভারতবাসীর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বলে, একটি দলের আনুষ্ঠানিক দায় এড়ানোর মতো সামান্য বিষয় এটা নয়। এটা বাস্তবিকই এক ক্রনিক ব্যাধি। নষ্ট রাজনীতিই হল এই ব্যাধির শিকড়। দেশকে এই অন্ধকার যাত্রা থেকে উদ্ধার করার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব যার, সে হল কেন্দ্রীয় শাসক দল। বিজেপি কি পারবে তাদের অচেনা সেই রাস্তায় হাঁটতে? তারা মুখে যে নীতির রাজনীতির কথা বলে সেটা আসলেই এই বিপরীত যাত্রা, কর্পোরেট তোষণের উল্টো মেরুতে যার অবস্থান।