গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
সেনা জওয়ানরা দেশের সম্পদ, দেশবাসীর গর্ব। তাঁদের কর্তব্যনিষ্ঠা দায়িত্বপালনে ত্রুটি নেই। তাঁদের জন্যই দেশবাসী থাকেন সুরক্ষিত। তাই কোনও কাপুরুষোচিত হামলায় যদি একজন জওয়ানেরও মৃত্যু ঘটে তাহলে তা অপূরণীয় ক্ষতি। শহিদ জওয়ানদের আত্মবলিদান ভোলবার নয়। তবে ওই ঘটনা অনেকগুলি প্রশ্নকে সামনে এনে দিল। জওয়ানরা মাওবাদী দমনে যাচ্ছেন তার আগাম খবর কি পৌঁছে গিয়েছিল মাওবাদীদের কাছে, যার ফলে ছক কষে ফাঁদ পাততে তারা সক্ষম হয়েছে? অথবা মাওবাদীদের ছক কষার খবর কি গোয়েন্দা দপ্তরের কাছে আগে ছিল না? এক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর হয়েছে কি না তা স্পষ্ট হওয়া দরকার। মাওবাদী দমনে কেন্দ্র যে ব্যর্থ এ ঘটনা তারই প্রমাণ। বাংলার সরকার মাওবাদী দমনে যেভাবে সফল হয়েছে তা অনুকরণযোগ্য হতে পারত। বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী সক্রিয়তার কারণে জঙ্গলমহলে দিনে-রাতে ছিল আতঙ্কের পরিবেশ। খুন যেন দৈনন্দিন ঘটনা। পরিবর্তনের জমানায় মাওবাদী দমনে সরকারের সদর্থক ভূমিকায় আমূল বদলে গেছে জঙ্গলমহল। প্রশ্ন হল, মাওবাদী দমনে বাংলার সরকার সফল হতে পারলে কেন্দ্রের সেই ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না কেন? শুধু জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শহিদ পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েই প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রশ্ন উঠবেই, নোটবন্দির সময় কী বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি? তিনি তো দাবি করেছিলেন, নোটবন্দির কারণে জঙ্গি, মাওবাদীদের কাছে নগদ টাকার জোগান বন্ধ হয়ে যাবে? মুছে যাবে মাওবাদী সমস্যা। তার কী হল? কেন তাহলে বারবার মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জওয়ানদের প্রাণ দিতে হচ্ছে? গতবছরও তো মাও নাশকতায় ১৭ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। তাঁদের আত্মবলিদান বৃথা যাবে না। জবাবদিহি করতে হবে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। কেন বারবার জওয়ানের মৃত্যু ঘটছে? আসলে কোনও শাসকের দখলদারির মানসিকতা তীব্র হলে আসল সমস্যার সমাধান অধরাই থেকে যায়। দেশে হাজারো সমস্যা থাকলেও মোদি-শাহ জুটির এখন একটাই লক্ষ্য। ভোট। সবকিছু ছাপিয়ে তাঁরা ব্যস্ত প্রচারের কাজে। তাঁরা বঙ্গজয়ের স্বপ্নে বিভোর। তাই প্রশ্ন, মাওবাদী সক্রিয়তা রোধে যতটা ধ্যান দেওয়া প্রয়োজন তা কি দেওয়া হয়েছিল? তবে কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য জওয়ানদের কুর্নিশ জানাতেই হয়। কথায় কথায় দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদের বুলি আওড়ে, নিজেদের সাফল্যের ধ্বজা উড়িয়ে যে মাওবাদী সমস্যা সমাধান করা যায় না তার দৃষ্টান্ত রইল ছত্তিশগড়।
মাওবাদী দমনে চাই জোরদার অভিযান। দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। কেন্দ্রের সরকার বিরোধী কথা বললেই যাঁরা রাষ্ট্রদ্রোহের গন্ধ খোঁজেন এবার তাঁদের ভাবাবার সময় এসেছে যে মাওবাদী দমন, নাকি ভোটের প্রচার—কোনটা বেশি জরুরি? ভোটের প্রচারেই যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হেভিওয়েট মন্ত্রী বেশি সময় ব্যয় করেন তাহলে দপ্তরের কাজে যথোচিত মনোনিবেশের অভাব ঘটছে না তো? এই সুযোগেই কি মাওবাদী সক্রিয়তা বাড়ছে? বিরোধী নিন্দুকেরা কিন্তু ইতিমধ্যেই এ নিয়ে শোরগোল তুলছেন। এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। এবার দেখা যাক, মোদি সরকার মাওবাদী দমনে কতটা সক্রিয় হয়। নিছক হুঙ্কার নয়, কড়া পদক্ষেপ নিলেই শহিদদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হবে।