কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
এই ঘটনার পর বহু প্রশ্নই মাথাচাড়া দিচ্ছে। প্রথমত, ভোটকর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ হলে তাঁরা কী করে এই কাজ করলেন? দ্বিতীয়ত, বৃষ্টি ভেজা রাতে ওই সময় ঠিক ওই জায়গায় কী করে বিজেপি নেতার খালি গাড়ি পৌঁছে গেল? তা কি একেবারেই কাকতালীয় ঘটনা? তৃতীয়ত, ওই উদ্ধার করা ইভিএম মেশিন যে অক্ষত ছিল তা কি সব দলের প্রতিনিধিদের সামনে প্রমাণ করা হয়েছে? আছে আরও নানা প্রশ্ন। বিক্ষোভকারী এলাকাবাসীদের অভিযোগ, কারচুপি করতেই নাকি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ইভিএম। অভিযোগ যখন উঠছে তখন এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া দরকার। জনমনে জেগে ওঠা এ সংক্রান্ত যাবতীয় সংশয় দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কারণ গণতন্ত্রের সুরক্ষায় স্বশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা তাঁরাই। তাঁদের দায়িত্ব অনেকখানি। পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি থেকেই ভোটবন্দি ইভিএম উদ্ধারের ঘটনায় যে সন্দেহ দানা বেধেছে তা দূর করারও দায় একটা থেকেই যায়। ভোটবন্দি ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণের এই গাফিলতি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় একটা দাগ ফেলে দিল। কর্তব্যে গাফিলতি সাংবিধানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছ থেকেই আশা করা যায় না। বিজেপি’র গর্বের ডবল ইঞ্জিন সরকারের জায়গায় নজিরবিহীন এমন কাণ্ডের প্রতিবাদে বিরোধী দল বিশেষত কংগ্রেস যেভাবে সরব হয়েছে তাতে বিজেপি শিবির চাপে পড়েছে। ইভিএম আনা নেওয়ার বিধি ভাঙার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতিতেও তরজা শুরু হয়েছে। প্রতিবেশী রাজ্য অসমের ঘটনার রেশ এসে পড়ছে বাংলাতেও। কারণ এখানেও ভোট হচ্ছে। ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন হিসাবে দেখা তাই ঠিক হবে না। এই কারণেই সম্ভবত বিভিন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে ইভিএম পাহারা দেওয়ার প্রসঙ্গটি ঘুরেফিরে আসে। অসমের ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিল ভোটের পর ইভিএম কতটা সুরক্ষিত? তবে ইভিএম-এ কারচুপি, ইভিএম বদল, নির্বাচনের পর ইভিএম ধরা পড়ার অভিযোগ কিন্তু নতুন নয়। অতীতেও একাধিক নির্বাচনের পর এমনসব গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু অভিযোগগুলি সঠিক না বেঠিক ছিল তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটানোর ব্যবস্থা হয়নি। এই কারণেই অসমের খবরের প্রেক্ষিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। একথা ঠিক, বেসরকারি গাড়িতে ভোটবন্দি ইভিএম পাওয়ার বিষয়টি যেমন বিপজ্জনক তেমনই নির্বিঘ্ন সুষ্ঠু নির্বাচনেরও তা প্রমাণ বহন করছে না। অনভিপ্রেত এই ঘটনার দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। ভোটাররাও জানতে চায় কেন এমন অনৈতিক ঘটনা ঘটল? এর জবাবদিহি করতেই হবে। প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারক ইভিএমের মতো গুরুত্বপূর্ণ মেশিনটি ব্যক্তিগত গাড়িতে তোলার পক্ষে কোনও যুক্তিই দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে শোভা পায় না। বিশেষত তিনি নিজেই যখন একজন প্রার্থী। ইভিএমের গুরুত্ব তাঁর অজানা নয়।
সুষ্ঠভাবে ভোট পরিচালনা করাটা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটা বড় পরীক্ষা। আদর্শ আচরণবিধি লাগু হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কাজ ঠিকমতো সামলানোর জন্য কমিশনেরই থাকে যাবতীয় দায়িত্ব। গণতন্ত্রে ভবিষ্যৎ নির্ণায়ক শক্তি হল ভোটার। তাঁদের ভোটবন্দি ইভিএমই যদি সুরক্ষা বলয়ে না থাকে তাহলে কীভাবে তাঁরা ভরসা রাখবেন নির্বাচন ব্যবস্থায়? নির্বাচন কমিশন ভোটারদের সেই ভরসা জোগাতে না পারলে তো গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবটি মাঠে মারা যাবে। অসমে ইভিএম আনা নেওয়ায় যে বিধি ভাঙার ঘটনাটি ঘটল তা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার দৃষ্টান্ত হতে পারে না।