বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে মোদি জমানায় একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ক্ষতির বহর বেড়েছে। রুগ্ন হয়ে পড়েছে বহু সরকারি সংস্থা। বিক্রির তালিকায় চলে এসেছে এয়ার ইন্ডিয়াসহ অনেকগুলি সংস্থা। এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক দরপত্র জমা নেওয়ার কাজও শেষ হয়ে গেছে, নতুন মালিকানা ঘোষণার অপেক্ষা! বেসরকারিকরণের চিন্তাভাবনা থেকে বাদ যায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও। বেসরকারি পুঁজিকে স্বাগত জানাতে গিয়ে এই সরকার মানুষকে কার্যত বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। দেশ ও দেশবাসীর স্বার্থরক্ষার কথা বিবেচনায় না রেখে সম্পদ বিক্রির অনাচার শুরু করেছে। এর মাশুল দিতেই হবে। একটা সময়ে বিএসএনএলই ছিল গর্ব, তার পরিষেবায় আস্থা ছিল গ্রাহকদের। কেন বিএসএনএল পরিষেবা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করেনি সরকার। নেয়নি উপযুক্ত ব্যবস্থা। এখন সমস্ত সার্কেলে মারাত্মক একটি নির্দেশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সংস্থার মালিকানাধীন জমি বিক্রি করে মোট দু’হাজার ৭০ কোটি টাকা তুলতে চটজলদি পদক্ষেপ নিতে হবে! রাজ কোষাগার ভরানোর জন্য এমন জঘন্য উদ্যোগে সঙ্গত কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সংস্থার কর্মী অফিসাররা। টাকা তোলার জন্য এমন হীন প্রচেষ্টা কোনও আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখানো সরকার যে নিতে পারে সেটা ভাবাই কঠিন। গরিবের দোস্ত সেজে এ সরকার গরিবকে ভাতে মারারই চেষ্টা করছে। মোদি শাসনে গরিব ধনীর বৈষম্য বেড়েছে। অর্থসঙ্কট মোকাবিলায় বিকল্প আয়ের হদিশ পেতে ব্যর্থ এই সরকার যেভাবে ঢালাও বেসরকারিকরণ ও সম্পদ বেচার পথে হাঁটছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে দেশে গর্ব করার মতো কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অস্তিত্ব থাকবে কি না সন্দেহ। সরকারের সৌজন্যে কৌলীণ্য হারাতে বসেছে দেশের বহু সরকারি সংস্থা। এই বিজেপি সরকারই কয়লাখনি বেসরকারি হাতে তুলে দিতে কোল মাইনস (স্পেশাল এডিশন) অ্যাক্ট ২০১৫ অনুমোদন করিয়েছে। দেশের গর্ব ভারতীয় রেলেও বেসরকারিকরণে উদ্যোগী হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে নিজের পায়ে হাঁটতে এই সরকার অক্ষম। তাদের আত্মনির্ভর ভারত গঠনের স্লোগানটি দিবাস্বপ্নের মতো ঠেকছে। অক্ষমতা ঢাকতেই সরকার নিচ্ছে নানা কৌশল। খাদের কিনারে এখন দেশের অর্থনীতি। ঋণের বোঝা প্রতিটি মানুষের মাথার উপর। দেশের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে সরকারের ভাঁড়ারে পর্যাপ্ত অর্থ আনার চেষ্টায় নিয়ম নীতিরও বালাই থাকছে না। ধিক্কার জানাতে হয় এই প্রবণতাকে।
দেশের মানুষকে অসহনীয় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়ে লম্বা চওড়া বুলি আওড়ানো বা প্রতিশ্রুতির ডালি সাজানো এবার তাই বন্ধ হওয়া উচিত। পায়ের তলার মাটিটাই যদি বিক্রি হয়ে যায় তাহলে কীসের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে মানুষ! কীভাবে স্বপ্ন দেখবে? উন্নত ভারতের স্বপ্ন দেখানোর আগে এই বিষয়গুলি ভাবা দরকার। দেশের মূল্যবান সম্পদ সম্পত্তি বিক্রি করে কখনও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। গঠনমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। সরকার ভুলে যাচ্ছে, ধাপ্পা দিয়ে দেশবাসীকে আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখালেও আসল সত্যটিকে আড়ালে থাকে না। নির্মম হলেও কঠিন বাস্তবটি সামনে আসেই। বোঝাই যাচ্ছে, মোদি সরকার দেশ গড়ার বদলে সম্পদ বেচতেই বেশি আগ্রহী। বিএসএনএল-এর সম্পত্তি বিক্রি যেন তারই উদাহরণ।