বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
উল্টোদিকে কেন্দ্র কী করছে? ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই কিল মারার গোঁসাই। কেন্দ্রের ভূমিকাটা অনেকটা সেরকমই। লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি। তা থেকে তারা সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে পারেনি। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে মোদি সরকার। পেট্রল, ডিজেলের দাম নাগাড়ে ১২ দিন রেকর্ড বৃদ্ধির পর রবিবার থিতু হয়। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়। তেলের দাম বাড়লে পণ্য পরিবহণ খরচ বাড়ে। বাড়ে জিনিসপত্রের দাম। তা সত্ত্বেও কেন্দ্র জ্বালানি তেলের উপর যে কর নেয় তা কমানোর উদ্যোগ না নিয়ে নির্দয় আচরণই করেছে। যা অনভিপ্রেত। করের বোঝা কমানোর বদলে নির্লজ্জের মতো জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির দায় পূর্বতন ইউপিএ সরকারের উপর চাপানোর চেষ্টা করেছে! কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের উপর শুল্ক কমালে রাজ্যগুলিও তাদের ভ্যাট কমাবে তার কী গ্যারান্টি আছে? তিনি এও বলেছেন, পেট্রল ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে হলে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারকেই একযোগে সক্রিয় হতে হবে। সরাসরি না বললেও বক্তব্যেই স্পষ্ট, কেন্দ্র নিজে থেকে শুল্ক কমানোর রাস্তায় না হেঁটে রাজ্যগুলির উপর চাপ দিতে চাইছে। এভাবে রাজ্যের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশলটি কাজে এল না মমতার সরকার লিটার প্রতি এক টাকা কর ছাড়ের মাস্টার স্ট্রোক দেওয়ায়। এবারই যে প্রথম বাংলার সরকারের এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেল তা কিন্তু নয়। এর আগেও ২০১৮ সালে যখন জ্বালানির দাম হু হু করে বাড়ছিল তখনও রাজ্য সরকারের এমন ভূমিকাই দেখা গিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার এই প্রচেষ্টার সঙ্গে বিধানসভা ভোটের কোনও সম্পর্ক খোঁজাটাও মূখার্মি। তবে রাজ্যের প্রাপ্য কর থেকে ছাড় দেওয়ার এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে মোদি সরকারকে কিছুটা চাপে ফেলল। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয় যে, এবার কি রাজ্যের দেখানো পথ অনুসরণ করে কেন্দ্র জ্বালানি তেলের উপর তার শুল্ক কমাবে? রাজ্যের এই সিদ্ধান্তটি কার্যত কেন্দ্রকে এই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল। পেট্রল, ডিজেলের উপর চাপানো করের সিংহভাগই কেন্দ্র সেস হিসেবে আদায় করে। এই সেস ব্যতিক্রমী কর ব্যবস্থা হওয়ায় রাজ্যগুলি এর পাওনা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। এছাড়া জ্বালানি তেলের উপর শুল্ক কমানোর দাবি অনেক আগেই তুলেছিল বিরোধীরা। কেন্দ্র কর্ণপাত করেনি। তেলের উপর শুল্ক চাপিয়ে রাজকোষের ঘাটতি পূরণের যে ব্যবস্থা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার করছে তাকে মুনাফা লাভের চেষ্টা বলেই মনে করেছেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তিনি তেলের দাম কমিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজধর্ম’ পালনের পরামর্শ দিয়েছেন।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে হলে জ্বালানি তেলের দাম কমানোটা জরুরি। তাই বঙ্গে জ্বালানি তেলের দামে লিটারে এক টাকা ছাড়ের ঘোষণার পর সবার নজর এখন কেন্দ্রের দিকে। প্রশ্ন একটাই, কেন্দ্র কী করবে? রাজ্যের সিদ্ধান্ত বিপাকেই ফেলল কেন্দ্রকে। রাজ্য যে মানবিকতা দেখাল কেন্দ্র তা দেখাতে পারছে না কেন!