কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মহল টের পেল, ভারতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড লকডাউনের পূর্ববর্তী অবস্থায় পৌঁছতে চলেছে। বেকারত্বের হারও কমতে শুরু করেছে। ২০২০-র এপ্রিলে বেকারত্বের হার রেকর্ড হয়েছিল ২৩.৫২ শতাংশ। সেটা ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে গত সেপ্টেম্বরে ৬.৬৮ শতাংশে নেমে আসে। গত মাসে সারা ভারতে বেকারত্বের হার আরও কমে হয়েছে ৬.৫৩ শতাংশ। অর্থনীতির পণ্ডিতদের অভিমত, ভারতের এই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব কৃষিক্ষেত্রের। যখন ভারতীয় অর্থনীতির সব ক্ষেত্র একে একে বিমুখ করেছে তখন মুখরক্ষা করেছে সবুজ কৃষিক্ষেত্র, একা কুম্ভের মতো। খরিফ, রবি দু’টি শস্যেরই স্বাভাবিক উৎপাদন পেয়েছে সারা ভারত। তার ফলে খাদ্যসঙ্কট যেমন এড়ানো গিয়েছে, তেমনি গ্রামীণ কর্মসংস্থানে এক অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে কৃষিক্ষেত্র। বিশেষ করে রাজ্যে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন, তখন তাঁদের দিকে বিকল্প কর্মসংস্থানের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল একমাত্র কৃষিক্ষেত্র। কোভিডের আক্রমণ যখন ভয়ানক তীব্র, তখনও কৃষি-অর্থনীতির বিকাশ ঋণাত্মক গতি নেয়নি। ভারতের সমগ্র অর্থনীতির ঋণাত্মক গতি রুখে দিয়ে ধনাত্মক গতি পেতে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে কৃষিক্ষেত্র বা কৃষি উৎপাদন। অতীতেও ভারতীয় অর্থনীতি বারবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ঘুরেও দাঁড়িয়েছে প্রতিবার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিবারই বাঁচিয়ে দিয়েছে কৃষি। কোভিড পর্বে তারই পুনরাবৃত্তি দেখলাম আমরা। অর্থাৎ এই যাত্রায়ও ভারতীয় অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন কৃষকরা।
কিন্তু প্রতিদানে কী পেলেন তাঁরা। কৃষি ও কৃষক বিরোধী একাধিক কেন্দ্রীয় আইন। আইনগুলি বাতিলের দাবিতে তাঁদের লাগাতার আন্দোলন চলছে রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে। কিন্তু মোদি সরকার সেভাবে কর্ণপাত করছে না। সাক্ষাৎ অন্নদাতাদের প্রতি দেশের শাসকের এই চরম অবহেলা এবং অকৃতজ্ঞতার নীতি বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে। তবুও বিতর্কিত আইন কার্যকর করার লক্ষ্যেই অবিচল সরকার। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের সরকারের কাছে অগ্রাধিকার কৃষকের কল্যাণ। রাজ্য সরকারের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এখানে কৃষকের আয় তিনগুণ হয়েছে। এছাড়া কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের আরও আর্থিক সুরাহা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। এই প্রকল্পে আগেই সহায়তা পেতেন ৫২ লক্ষ কৃষক। দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে সম্প্রতি আরও ১১ লক্ষ কৃষককে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি শুধু সম্প্রসারিতই হয়নি, নতুন বাজেটে কৃষকদের জন্য ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির মালিক-কৃষকরাই কেন্দ্রীয় ভাতা পাচ্ছেন। সবচেয়ে সুখের কথা এই যে, রাজ্যের স্কিমে ভাগচাষি এবং বর্গাদাররাও যুক্ত হয়েছেন। এখানে অনেক কম জমির মালিক-কৃষকরাও ভাতা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হচ্ছেন। সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত প্রায় সকলেই। কৃষক কল্যাণের এই সরকারি নীতি অভূতপূর্ব। বস্তুত অন্নদাতাদের প্রকৃত সম্মান জানাচ্ছে বাংলার বতর্মান সরকার। কোভিডের ধাক্কা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে তাঁদের যে অপরিমেয় অবদান রয়ে গেল তার জন্য এটাই কৃষকদের প্রাপ্য। অন্নদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর এই রাজনৈতিক সদিচ্ছা কেন্দ্র-রাজ্য নির্বিশেষে সারা ভারতের অনুসরণ করা উচিত।