বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, জেএমবি হল বাংলাদেশের একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। বছর বাইশের পুরনো এই সংগঠনটি ব্রিটেনেও ‘টেরর গ্রুপ’ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেএমবি প্রথম সে-দেশের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিছু এনজিও-র উপর হামলা চালায় জেএমবি। অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশ সরকার জেএমবি-কে ‘জঙ্গি সংগঠন’ দেগে দিয়ে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে। তারপর থেকে সংগঠনটি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ জুড়ে শ’তিনেক জায়গায় পাঁচশোর বেশি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থরহরি কাণ্ড বাধিয়ে দেয়। জেএমবি ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করে। বাংলাদেশে, এমনকী উপমহাদেশের অন্য বহু স্থানেও মৌলবাদের প্রচারে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ২০১৬ সালে এবং তার পরবর্তীকালেও বাংলাদেশে পরপর মুক্তমনা নাগরিকদের হত্যা করা হয়। মানবতা-বিরোধী এই ধারাবাহিক অপরাধ জেএমবিরই অপকীর্তি ছিল। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে জেএমবির অন্তত দশ হাজার সদস্য সক্রিয় রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের নীতি অনুসারে বাংলাদেশের পুলিস ও গোয়েন্দা বিভাগ জেএমবির উপর খড়্গহস্ত। র্যাবের তৎপরতায় ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে, বিচারে কয়েকজন জঙ্গির সাজাও হয়েছে। ২০১৫ সালের দু’টি ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, জেএমবি সরাসরি পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকেও ফান্ড পাচ্ছে! এবং, ওই টাকা ঢাকাতেই পৌঁছে যাচ্ছে।
ভারতের অর্থব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তোলার যাবতীয় নষ্টামিও জেএএমবি করে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ ও অসম সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল ভারতীয় টাকা ঢোকানোর কথা ২০১৫ সালে ধৃত এক কীর্তিমান কবুল করেছিল। বাংলাদেশের রাজনীতি সাধারণভাবে দুই মেরুতে বিভক্ত। আওয়ামি লিগ ও আওয়ামি লিগ-বিরোধী। আওয়ামি লিগ এবং তার সঙ্গী দলগুলি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু শ্রেণী সাধারণভাবে রাজনীতির এই অংশটিকে পছন্দ করে। আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাঝখানে আটটি বছর বাদ দিলে ১৯৯৬-২০০১ পর্বেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৮-র নির্বাচন নিয়ে তিনি চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ইতিহাসে এটাই কোনও প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘতম ইনিংস। ‘ফোর্বস’ থেকে ‘টাইম’ অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন এজন্য তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বের তালিকায় সামনে সারিতে একাধিকবার জায়গা হয়েছে তাঁর। বস্তুত, শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্বের সামনে বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি ‘পিগমি’ তুল্য হয়ে উঠেছে। এটা উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশকে ফের অশান্ত করে তোলার জন্য তারা মরিয়া। ‘ভারত-বন্ধু’ বলে সুবিদিত হাসিনা সরকারকে হটাবার ছক কষে যাচ্ছে পাকিস্তানও। কিন্তু সেদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য সুবিধে করতে পারছে না। জঙ্গি লেলিয়ে দিয়ে এই অপশক্তি কি ফের নতুন কোনও চ্যালেঞ্জ জানাতে তৎপর হয়েছে? এই প্রশ্ন ভীষণ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে—ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় সরকারকে। তাই অস্ত্র কারখানার হদিশের এই ঘটনাটিকে কোনওভাবেই ‘সামান্য’ ভাবার সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ অশান্ত হলে তার কুফল সবার আগে ভারতকে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গকে ভুগতে হবে।