কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কিন্তু এবারটা অন্যরকম। ২০২০ সাল জুড়ে একটা ভয়ানক যুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছি আমরা। বছর শেষ হয়ে গেল, কিন্তু সেই যুদ্ধের সামনে যবনিকা টানা যায়নি। হিসেবের খাতার মতো যুদ্ধের বাকিটা ‘ক্যারি ফরওয়ার্ড’ হয়ে গিয়েছে ২০২১-এর ভিতর। বিশ্বব্যাপী এমন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শতবর্ষের ভিতর প্রথম। কিন্তু এ এমন এক যুদ্ধ, যার সামনে সারা পৃথিবীর মানবজাতির ‘জয়’ ছাড়া কোনও শর্ত নেই। বর্ষবরণে আমাদের সেই একমাত্র প্রার্থনা—করোনা আমরা নির্মূল করে ছাড়ব, তা ভাইরাসটি যত রকম কৌশলী রূপ নিয়ে আমাদের রক্তচক্ষু দেখাক না কেন। গত এক বছরের লড়াইতে করোনাকে অনেকাংশেই কাবু করে ফেলেছে মানুষ, সারা পৃথিবীতে। যেটুকু বাকি আছে, সেটুকুর জন্য কয়েক প্রকারের ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে নানা দেশে—ঠিক যেন শেষ রাতের ‘ওস্তাদের মার’ গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যে নতুন তাণ্ডব শুরু হয়েছে ব্রিটেন জুড়ে। ভাইরাসটির নতুন স্ট্রেইনের আবির্ভাব ঘটেছে। বিপদটি গোচরে আসতেই ব্রিটেনসহ সারা পৃথিবী সতর্ক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটি ধরে ফেলার আগেই নয়া স্ট্রেইন অনেক দেশেও অনুপ্রবেশ করেছে, বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে। বাদ পড়েনি ভারতও। প্রথমে বেঙ্গালুরু ও দিল্লির নাম শোনা যাচ্ছিল। এখন ওই পঙ্ক্তিতেই জায়গা করে নিয়েছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গও। অন্যদিকে, করোনা ভাইরাসের পুরনো রূপটির সংক্রমণ এখনও অব্যাহত, তাতে মৃত্যুও ঘটছে কমবেশি। তাই বালিতে মুখ গুঁজে রেখে ঝড়কে উপেক্ষা করার সুযোগ কোনও মতেই নেই। বরং আমাদের নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা হোক, করোনাকে সবরকমে নির্মূল করব আমরা, সবাই মিলে। তার জন্য সবচেয়ে বড় ভরসা ভ্যাকসিন প্রায় নাগালে চলে এসেছে। ২০২০ সাল শেষ হওয়ার দু’দিন আগেই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে ব্রিটেনের সরকার। তাতে ভীষণভাবে আশান্বিত হয়ে উঠেছে ভারত।
ব্রিটেনের সুখবর মিলতেই বুধবার তড়িঘড়ি আলোচনায় বসে যায় ভারতের ড্রাগস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিএসসিও। অক্সফোর্ডের গবেষণালব্ধ ভ্যাকসিন বিদেশে তৈরি করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ভারতেই সেটিই ‘কোভিশিল্ড’ নামে প্রস্তুত করছে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট। ১৮-৯৯ বছর বয়সি ১৬০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপর তার ট্রায়াল চলেছে। এবং, এই পর্ব গবেষকদের কাছে যথেষ্ট আশাপ্রদ বলেই মনে হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের চার প্রান্তে ভ্যাকসিন নিয়ে সফল মহড়াও হয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই, সিডিএসসিও-র বিশেষজ্ঞ কমিটি সিরামের ভ্যাকসিনের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করেছে। আজ বছরের প্রথম দিনেই ফের বসতে চলেছে ওই বৈঠক। ভারতেও কোভিশিল্ডের ছাড়পত্র সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ব্রিটেনে টিকাকরণ শুরু হচ্ছে ৪ জানুয়ারি। ভারত প্রথম পর্বে ৩০ কোটি ডোজ পাওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। সিরাম ইতিমধ্যেই ৪ কোটি ডোজ তৈরি করে ফেলেছে। সব মিলিয়ে কোভিড যুদ্ধে জয়লাভের ক্ষেত্র প্রস্তুত প্রায়। কোমর বেঁধে নামছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারগুলিও পূর্ণ সহযোগিতা করতে তৈরি রয়েছে। দেখতে হবে সমন্বয়ের বিন্দুমাত্র অভাব যেন না ঘটে। চেনা রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা দূরে রাখতেই হবে। তাহলে এই দীর্ঘ লড়াইয়ের সামনে চিরদিনের জন্য যবনিক টেনে দিতে পারব আমরা। ২০২১ থেকে নিশ্চিতরূপে শুরু হবে নতুন এক উজ্জ্বল অধ্যায়—বাংলা, ভারত ও সারা পৃথিবীর জন্য।