কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তারই মধ্যে গড়পড়তা। তার বড় প্রমাণ—বিনামূল্যে খাদ্য বণ্টনের রেশন কার্ড, বিপিএল কার্ড, একশো দিনের কাজের জব কার্ড প্রভৃতি নিয়ে রাজনীতি সবচেয়ে ফলপ্রসূ। পয়সার অভাবে এখনও হাজার হাজার মহিলা হাসপাতালে যেতে পারেন না। বাড়িতে, এমনকী রাস্তাঘাটেও সন্তান প্রসব করেন তাঁরা। অসংখ্য বয়স্ক মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়। বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন কিংবা বন্ধ্যাকরণ শিবির ঘুরে এসে একসময় অনেক নারী-পুরুষ গভীর সঙ্কটে পড়তেন, দেখা যেত। অঙ্গহানি, এমনকী প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটত ওইসব অনির্ভরযোগ্য বেসরকারি কর্মসূচি থেকে। ‘চিকিৎসার খরচ না-মেটানোয় মৃতদেহ আটকে রেখেছে বেসরকারি হাসপাতাল’—সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে এমন কিছু শিরোনাম। আবার কখনও শোনা যায়—‘মোটা টাকা ডাউন পেমেন্ট করতে অপারগ পরিবার, মুমূর্ষু রোগীকে ফিরিয়ে দিল হাসপাতাল!’ মাঝেমধ্যে এমন অনেক দুঃসংবাদ থেকে শিউরে উঠি আমরা। কিন্তু কিছু করার থাকে না। কোনও কোনও অসহায় মানুষ এর ভিতরে নিজেরই ভবিষ্যৎ দেখতে পান হয়তো। কারও-বা মনে পড়ে যায়, তাঁর চেনা কোনও মেধাবী যুবক কিংবা তরুণীকে অকাল মৃত্যু মেনে নিতে হয়েছে শুধু চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিল না বলে। অনেক বড় প্রতিভাকেও এই বাংলা, এই ভারত হারিয়েছে—সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না-হওয়ায়। কারণ সেই একটাই—টাকার অভাব।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর যে সমস্ত বিষয়কে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম চিকিৎসা পরিষেবা। বাম জমানায় চিকিৎসা ক্ষেত্রের অব্যবস্থা এখানে বস্তুত ব্যাধির পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সেটা তিনি জানতেন বলেই, দীর্ঘদিন বিভিন্ন হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করেছেন। শহরে, গ্রামে, পাহাড়ে, জঙ্গলমহলে প্রভৃতি প্রায় সর্বত্র সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যাগুলি জেনেছেন। সেইমতো চেষ্টা করেছেন সবধরনের হাসপাতালের খোলনলচে বদলে ফেলতে। সকলের জন্য ন্যায্যমূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সরকারি হাসপাতালগুলিতে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা তো আছেই। পাঁচ-দশ লাখ টাকার জটিল অপারেশনও সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় করে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের খয়রাতি-রাজনীতির পরোয়া না-করে এই সরকার ইতিমধ্যেই সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ‘স্বাস্থ্যসাথী’র সুরক্ষা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল, রাজ্যের দশ কোটি মানুষের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিমার সুরক্ষা দেওয়া। তার জন্য নাগরিকদের কোনও খরচ করতে হবে না। সব খরচ সরকারের। এর জন্য দু’হাজার কোটি টাকা খরচ হবে জেনেও মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে যাচ্ছেন নির্ভয়ে, আন্তরিকভাবে। এই স্কিমে বাংলার মানুষ স্থানীয় সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই, দিল্লিতে এইমসে কিংবা ভেলোরে গিয়েও নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারবেন। এতে একটাই শর্ত, কর্মসূত্রে বা অন্যভাবে কোনও সরকারি স্বাস্থ্য বিমা বা প্রকল্পের সুবিধা নেওয়া যাবে না। কোনও সন্দেহ নেই, ভারতের কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবায় এই ধরনের প্রকল্প এটাই প্রথম। ‘কৃষি বিপ্লব’, ‘শ্বেত বিপ্লব’-এর পর এটা ‘স্বাস্থ্য বিপ্লব’ নামে চিহ্নিত হওয়ার দাবি রাখে। এই কর্মসূচির দ্রুত ও সফল রূপায়ণই কাম্য। কেন্দ্রের উচিত, রাজ্যের এই জনমুখী প্রকল্পের সঙ্গে সবরকমে সহযোগিতা করা। অন্য রাজ্যগুলিও এই পথে অগ্রসর হলে লাভবান হবে সারা ভারত।