করোনাকালে বহু মানুষেরই আয় কমেছে, অথচ বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। দু’মাস এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার পর ফের বাড়ল পেট্রল-ডিজেলের দাম। তাই আশঙ্কাও বাড়ল। এমনিতেই গরিব-মধ্যবিত্তের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। মূল্যবৃদ্ধির আঁচে দগ্ধ আম জনতা। প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কোনও কিছুরই দাম কমার লক্ষণ নেই। আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল-সহ অনেক কিছুরই দাম আগে থেকেই বেড়ে বসে আছে। এরপর জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়লে তার ধাক্কা স্বাভাবিকভাবেই ফের এসে লাগবে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামে। কারণ তেলের দাম বাড়লে বেড়ে যায় পরিবহণ খরচ। তাই মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা শতগুণ বেড়ে গেল। তবু হুঁশ নেই কেন্দ্রের সরকারের। নেই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য যথোপযুক্ত উদ্যোগ। অথচ সঠিক পরিকল্পনা নিলে জিনিসের দাম সাধারণের নাগালে রাখা যেত। তা না করে দেশের শাসক এখন ভোট-রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত। গত অক্টোবরেই খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল বেশ চড়া, ৭.৬১ শতাংশ। শীতের মরশুমে সাধারণভাবে আনাজপাতির দাম একটু কমই থাকে। এবার ব্যতিক্রম। শাক-সব্জিসহ সবকিছুরই দাম বেশ বেশি। সঙ্গত কারণেই মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাই ফের পেট্রল ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ঘটনা অনেকটা গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো। মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া হলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পক্ষেও তা প্রতিবন্ধক। এসব জেনেবুঝেই কেন্দ্রের তরফে অদ্ভুত সব যুক্তি খাড়া করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বন্যা ইত্যাদি কারণে সব্জি পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই নাকি দাম বেড়েছে। বলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এ যুক্তি কি আদৌ ধোপে টেকে? সব্জি না হয় পচে নষ্ট হয়েছে। কিন্তু অন্যসব জিনিস—তার দাম বাড়ছে কেন? মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। কারণ লকডাউন উঠতেই যেভাবে পেট্রল ডিজেল দামি হচ্ছিল তাতে উদ্দেশ্য স্পষ্ট। সরকার তার আয় বাড়াতে তেলে বাড়তি শুল্ক যে চাপিয়েছে তা এখন আর কারও অজানা নয়। ৮২ দিন টানা লকডাউনের জেরে অনেক কিছুই থমকে থাকার পর গাড়ির চাকা ঘুরতেই দফায় দফায় তেল সংস্থাগুলি জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। কখনও হয়তো দাম সামান্য একটু কমেছে। কিন্তু বৃদ্ধির তুলনায় তা সামান্যই। সবসময়েই দোহাই দেওয়া হয় বিশ্ববাজারের। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে, বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম যখন কমে তখন সেই সুযোগ কি ঠিকঠাক মতো পায় ভারতবাসী? সেই হারে কি দাম কমে পেট্রল ডিজেলের? প্রতিবারই দেখা যায় বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম সামান্য বাড়তেই তড়িঘড়ি এদেশেও পেট্রল ডিজেলের দাম বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সরকার নীরব দর্শক হয়েই থাকে!
মাস দুই হল পেট্রল ডিজেলের দাম প্রায় একই ছিল। কিন্তু এবার ফের পেট্রল ডিজেলের দাম চড়তে শুরু করায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম ৪২ ডলার যখন হয়েছিল তখন এদেশে জ্বালানি তেলের দাম এত চড়েছিল যা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এখন অশোধিত তেলের দাম প্রায় ৪৪ ডলার। তাহলে এদেশে পেট্রল ডিজেলের দাম কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এসব ভেবেই উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। কারণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহণ খরচ আরও বাড়বে। সবকিছুর দামও তাই আরও অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। একে করোনা সঙ্কটে নাজেহাল মানুষ। তার উপর জিনিসের দাম আরও বাড়লে সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে আম জনতার। স্বস্তিতে নেই কেউ। এমনিতেই খাদ্যপণ্যের আগুন দামে বহু সংসারেই অভাব অনটন চলছে। মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে কেন্দ্রের নীরবতাই প্রমাণ করছে যেন সরকারের কিছুই করণীয় নেই। অতীতে এমন নজিরও আছে যখন দেখা গেছে বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দামে বিশেষ হেরফের না ঘটলেও এদেশে তেলের দাম বেড়েছে। কেন এমন ঘটনা ঘটে তারও কোনও সদুত্তর নেই।
দেশে অদ্ভুত এক ‘নির্বিকার’ সরকার চলছে। শাসক দলের নেতাদের একাংশ বাগাড়ম্বরে ওস্তাদ। মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকার ব্যর্থ হলেও
কোনও হেলদোল নেই। সত্যিই যদি কেন্দ্র মূল্যবৃদ্ধি কমাতে আগ্রহী হয় তাহলে অবিলম্বে পেট্রল ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে
হবে মোদি সরকারকে। এই কাজটি একেবারেই অসম্ভব নয়।
কেন্দ্রের উচিত তেলের উপর বাড়তি শুল্ক যাতে না চাপে তা দেখা। তেলের দামবৃদ্ধি আটকাতে কেন্দ্র কেন উৎপাদন শুল্ক কমাচ্ছে না?
প্রশ্ন উঠবেই। তাদের অজানা নয় যে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়লে সংসার চালাতে সঙ্কটে পড়বে সাধারণ মানুষ। এই সঙ্কট কাটানোর দায়িত্ব কিন্তু কেন্দ্রের মোদি সরকারেরই।