গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
আসলে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বেশিরভাগ রাজ্য কোভিড মোকাবিলা করতে নেমে বাস্তব থেকে অনেক দূরের অবস্থান নিয়েছে। তারা হয়তো ভুলে গিয়েছে, কোভিড আসলে এক যুদ্ধের নাম। স্বাধীনতা-উত্তর ভারত এত বড় যুদ্ধের সামনে এই প্রথম। ভারত-পাকিস্তান, ভারত-চীন প্রভৃতি একাধিক সম্মুখ-সমরের কথা মাথায় রেখেও এই কথা বলতে হচ্ছে। যে-কোনও যুদ্ধজয়ের জন্য প্রধান রসদ হল অর্থ। অর্থবল ছাড়া কোনও যুদ্ধে জেতা যায় না। কোভিডকে পরাস্ত করার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। পৃথিবীর কোনও দেশই কোভিডের বিপদকে ঠিকঠাক মাপতে পারেনি। চীন, ইউরোপ, আমেরিকা কেউই নয়। নরেন্দ্র মোদিও সেই গড্ডলিকায় গা ভাসিয়েছিলেন। মার্চের শেষদিকে লকডাউন ঘোষণার অব্যবহিত পরে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, কোভিড জব্দ করতে তাঁর প্রশাসন তিন সপ্তাহ সময় নেমে। তারপর কোনও ফাঁক দিয়ে তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে, তার হিসেব পাননি ভারতেশ্বর। চীন, আমেরিকা এবং ইউরোপ নিজেদের শুধরে নিতে অযথা দেরি করেনি। বেশিরভাগ বড় অর্থনীতি দিব্যি ঘর গুছিয়ে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সাত মাস পরেও নরেন্দ্র মোদিকে পূর্ববৎ দিশেহারা মনে হচ্ছে!
কারণ, অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখে লড়াই করতে হবে—সরকার এটা উপলব্ধি করেনি। আনলকের পাঁচ মাসেও এই বোধ কতটা কাজ করেছে সন্দেহ রয়েছে তা নিয়েও। লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোটখাটো শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য, যাকে এমএসএমই সংজ্ঞাভুক্ত করা যায়। ভারতীয় অর্থনীতির এটাই মেরুদণ্ড। এগারো-বারো কোটি পরিবার এই ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। এই ক্ষেত্র জিডিপির প্রায় ৩৬ শতাংশের দায়িত্ব বহন করে। রপ্তানি বাণিজ্যেও এই ক্ষেত্রের অবদান ৪৫ শতাংশের মতো। এমএসএমই সেক্টরই অসংগঠিত কর্মিদলের ভরসা। সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের বেশিরভাগ জিনিস ও পরিষেবা এই ক্ষেত্র উৎপাদন করে থাকে। কোভিডের ধাক্কায় এমএসএমই সেক্টর শুয়ে পড়ায় শুধু সংশ্লিষ্ট কাজের বাজার নষ্ট হয়নি, গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষকেও বিশেষ সঙ্কটে পড়তে হয়েছে। কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিক যে হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন, তা বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে লজ্জার। সারা পৃথিবীর কাছে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। দ্রুত জোগান বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য যে ধরনের ফিসকাল স্টিমুলাসের ব্যবস্থা করা জরুরি ছিল—কেন্দ্র তা অস্বীকার করে গিয়েছে কৌশলে। মোদি-সীতারামনের ধূর্তনীতি আশঙ্কামতোই সৎ অর্থনীতির সমার্থক হয়নি। পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্য লাগাতার প্রতিবাদ করেও সুরাহা পায়নি, সংবিৎ ফেরাতে পারেনি মোদি সরকারের। নিরুপায় হয়ে কয়েকটি সচেতন রাজ্য তাদের সীমিত ক্ষমতায় বিকল্পভাবে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করে চলেছে। একশো দিনের কাজে গুরুত্ব আরোপ, এমএসএমই সেক্টরে গতিসঞ্চার, সীমিত পরিসরে অতি সাবধানে উৎসবকে আঁকড়ে ধরা প্রভৃতি নানা উপায়ে জোগান বাড়াবার লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে। আনলক পর্বে বাংলা যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উন্নতির বিশেষ সাক্ষ্য রাখতে পেরেছে—তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই দৃঢ়তার ফসল। গুগল-সহ একাধিক সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে, কোভিড মোকাবিলা করতে নেমে পশ্চিমবঙ্গ ভেঙে পড়েনি। অর্থনীতির চাকায় গতি বজায় রেখেই লড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধজয়ের জন্য যেটা ভীষণ জরুরি। তাই এই চরম দুর্দিনেও বাংলাকে সারা ভারতের মধ্যে বিশেষ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে—তথাকথিত উন্নত রাজ্যগুলির চেয়েও দীর্ঘ লাগছে। বাংলাকে এই গতি বজায় রেখেই এগতে হবে, তাহলে কোভিড জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।