গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
তিনি দেশের প্রধান। দলের ঊর্ধ্বে দেশ। করোনা আবহের মধ্যে উৎসব মরশুমে দেশবাসীকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, বেপরোয়া হওয়ার সময় এটা নয়। একেবারে ঠিক কথা। কিন্তু! প্রধানমন্ত্রী বলেই কি তিনি ব্যতিক্রমী! সদলবলে রামমন্দিরে ভিত পুজোয় বা নানা ধর্মীয় স্থানে যাওয়া তাহলে কীসের দৃষ্টান্ত? নিন্দুকেরা প্রশ্ন তুলছে, ভিত পুজোর পুরোহিত এবং সেখানে উপস্থিত থাকা একাধিক পুলিস করোনা আক্রান্ত হলেও বিধিনিষেধের তোয়াক্কা তিনি নিজে কি করেছেন? সাবধানের মার নেই। করোনা প্রসঙ্গে এর আগে মহাভারতের যুদ্ধের কথা তুলে ১৮ দিনের লড়াইয়ে কথা বলেও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ কবে থামবে তা কারও জানা নেই। বরং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একজন ‘দেশ সেবক’ সকলের কথা ভাববেন, উৎসব মরশুমে সকলকে শুভেচ্ছা জানাবেন সেটাই উচিত কাজ। কিন্তু তিনি কী দৃষ্টান্ত রাখলেন? বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলা জয় যাঁর লক্ষ্য, সেই তিনি বঙ্গবাসীকে শারদ শুভেচ্ছাটা জানানোর সৌজন্যটুকুও দেখালেন না। দশেরা থেকে ঈদ, ছটপুজো থেকে দীপাবলির উল্লেখ করে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন। বাদ গেল শুধু দুর্গাপুজো। কারণ হয়তো একটাই। মোদি সরকারের কৃষি আইন, অর্থনীতি সহ নানা কাজের সমালোচনায় সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছে বাংলা। তাই কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই বাঙালির আবেগের উৎসব দুর্গাপুজো বাদ গেল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকে? বাংলার মানুষকে শুভেচ্ছা জানানোর সৌজন্য প্রকাশে এত অনীহা কেন? সচেতনভাবেই দুর্গাপুজোর কথা তিনি এড়িয়ে গেছেন।
বাস্তবকে অস্বীকার করে মানুষের মন জয় করা কঠিন। কবীরের দোহা বা তুলসী দাসের রামচরিতমানসকে স্মরণ করলে ভাষণ শোনার আকর্ষণ বাড়ানো যায়। কিন্তু তা করে কঠিন বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় না। এরপর শীত আসছে। দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবার যা হালচাল তাতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হবে। এই সহজ সত্যকে স্বীকার করে এখনই কেন্দ্রের উচিত চিকিৎসা পরিষেবায় আরও নজর দেওয়া। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যা ভাবছেন, কেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তেমন গঠনমূলক ভাবনার বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে না! অন্তত জাতির উদ্দেশে ভাষণে তেমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। অথচ উৎসব মরশুমের পর করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে এই আশঙ্কা থেকেই ২২৭৪টি কোভিড বেড বাড়িয়ে প্রস্তুত থাকছে বাংলা। মানুষকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা দিতে জেলাগুলিকেও কোভিড শয্যা, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় খামতি রাখতে চায় না রাজ্য প্রশাসন। দেশে আরও অনেক চিকিৎসকের প্রয়োজন। খুশির খবর যে, ডাক্তারিতেও ২৫০ আসন বাড়াচ্ছে রাজ্য। এই সিদ্ধান্তে সুদূরপ্রসারী ফল মিলবে। বাস্তবকে মেনেই রাজ্য প্রশাসনের যাবতীয় উদ্যোগ। তাই বলতেই হয়, শুধু সাফল্যের ধ্বজা ওড়ালেই প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে পারবেন না দেশের শাসক। স্মরণে রাখা দরকার, আত্মতুষ্টি অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।