উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে নতুনত্ব আছে। কর্মরতদের ... বিশদ
ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপির বেশি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাটা আল্টিমেটলি এক ‘জুমলা’ বা ধাপ্পায় পরিণত হবে। ফড়ে-দালাল খেদানোর নামে এগ্রিকালচার সেক্টরে কর্পোরেটের পত্তন হবে। এই কীর্তির জন্য বিজেপির নাম লেখা থাকবে ভারতের কৃষির ইতিহাসে।
সব মিলিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশ। করোনাকাল-সহ বারবার বড় বিপদে বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছেন যে কৃষকরা, তাঁদেরকেই আজ সবচেয়ে বেশি অসহায় ও উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।
তবে, এ নিয়ে শুধু হল্লা করে কাটিয়ে দেওয়ার রাস্তা নেয়নি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। খরিফ মরশুমে ফসল, বিশেষ করে ধান বিক্রিটাই এই মুহূর্তে বাংলার অর্থনীতির প্রধান বিষয়। রাজ্য সরকার সেই ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে কিনে নেওয়ার অভিযানে নামছে আগামী ২ নভেম্বর থেকে। মনে রাখতে হবে, এখানকার ৭১ লক্ষ ২৩ হাজার পরিবার সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত। বাংলার কৃষকদের ৯৬ শতাংশই ছোট চাষি। বাম আমল থেকে ফড়েরাজ বাংলার জন্য এক নির্মম সত্য। সেই অব্যবস্থা রাতারাতি পাল্টানোও যায়নি। কৃষককে সুরাহা দেওয়ার জন্য গভর্নমেন্ট প্রোকিওরমেন্ট সিস্টেমের উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। ৫২ লক্ষ টন ধান কেনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে খাদ্যদপ্তর। সেন্ট্রালাইজড প্রোকিওরমেন্ট সেন্টার বা সিপিসির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। প্রস্তুত থাকছে সরাসরি ধান ক্রয় কেন্দ্রগুলি বা ডিপিসিও। বিশেষভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্ঘ ও মহাসঙ্ঘগুলিকে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এই বিপণন সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সরকারের এক ও একমাত্র লক্ষ্য—ফড়ে-দালালদের খপ্পর থেকে কৃষকদের বের করা এবং তাঁদের সর্বাধিক দাম পেতে সাহায্য করা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে রাইটার্স দখল করেছিলেন কৃষকদের স্বার্থকে সামনে রেখে। বলেছিলেন, কৃষকদের আয় দ্রুত বৃদ্ধিই তাঁর লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যকে আরও বিস্তৃত করার পুরস্কার হিসেবে ২০১৬ সালে পুনর্নির্বাচিত হয় তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেব দিয়েছেন, ২০১১ সালে বাংলার কৃষকের গড়পড়তা বার্ষিক আয় ছিল ৯১ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা। এর জন্য এই সরকার অবশ্যই কৃতিত্ব দাবি করতে পারে।
বাংলায় আগামী বিধানসভা ভোটের অন্যতম প্রধান ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে এই কৃষি আইন। কৃষকরা আর কতদিন রাজনীতির পুতুল থাকবেন? কৃষকদের প্রকৃত মুক্তির পথ বের করতে হবে। তাঁদের ফসলের ন্যায্য দাম পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যে-কোনও পরিস্থিতিতে ন্যূনতম দাম দেওয়ার গ্যারান্টার হতে হবে সরকারকে। এজন্য দেশজুড়ে কৃষি পরিকাঠামোর উন্নতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রতিটি বড় গ্রাম এবং ছোট শহরের রাস্তাঘাট গাড়ি চলাচলের উপযোগী করতে হবে। যেসব অঞ্চলে বেশি ফসল হয় তার কাছাকাছি অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে বাজার তৈরি করতে হবে। হাজার হাজার নতুন বাজার দরকার। নিশ্চিত করতে হবে যে একজনও কৃষক কোনওভাবেই এমএসপির নীচে দাম পাবেন না। কৃষক এবং ক্রেতার মধ্যে বিবাদ মীমাংসায় কৃষক যেন কোনওভাবেই অসহায় বোধ না করেন। সবদিক থেকে কৃষকের সুবিচারটাই হতে হবে শেষকথা। তা না-হলে ভারতের কৃষি অর্থনীতি ভয়ানক বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে। এই একুশ শতকেও ভারত বিশেষভাবে কৃষিনির্ভর। তাই কৃষির বিপন্নতা সামগ্রিকভাবে ভারতের অর্থনীতির সামনেই বড় প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিতে পারে। একবগ্গা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নয়, রাজ্যগুলির সঙ্গে আগাম আলোচনার মাধ্যমেই কেন্দ্র একটি বাঞ্ছিত সর্বমান্য উপায় বের করতে পারে।