বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
করোনা সঙ্কটের জেরে মানুষ এখন খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে, বাঁচার লড়াই চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিরোধে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের সরকারের তরফে সেরকম তৎপরতা বা উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। ‘অপরিকল্পিত’ লকডাউনের জেরে দেশে দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে গেছে কয়েক কোটি মানুষ। দেশের অর্থনীতি প্রায় খাদের কিনারে পৌঁছলেও মোদি সরকারের কোনও হেলদোল নেই। এখন যেন তাদের প্রধান কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুমাত্র নানা বিধিনিষেধ জারি করে দেশ ও রাজ্যের মানুষকে ব্যতিব্যস্ত রাখা। আবার গালভরা ভাষণে তাদেরই মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা। ভাষণসর্বস্ব এমন একটি সরকারের নানা সিদ্ধান্তে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়ছে আমজনতা। করোনার কারণে লোকাল ট্রেনের চাকা এখনও ঘোরেনি। লোকাল ট্রেন কবে থেকে স্বাভাবিক হবে তা জানা যায়নি। অথচ স্টেশন আধুনিকীকরণের মোড়কে এই সরকার ট্রেনের টিকিটের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিঃশব্দে নিয়ে ফেলেছে। রেল চলাচল ফের শুরু হলেই যদি টিকিটের নতুন দাম আমজনতার ঘাড়ে চাপে তা নিঃসন্দেহে মানুষের উপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। রেলের ভাড়ার ব্যাপারটি রাজনৈতিকভাবে তো বটেই, সাধারণ মানুষের কাছেও খুবই সংবেদনশীল বিষয়। আত্মনির্ভরতার কথা সরকার মুখে বলছে। অথচ তারাই বেসরকারি সংস্থার রেল পরিষেবা চালুর জন্য লগ্নিকারীদের আকর্ষণ করতে যেভাবে উদ্যোগী হচ্ছে তাতে সাধারণ যাত্রীদের লাভ কতটা হবে? সরকার তার আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করবে তাতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু আমজনতার উপর কোপ পড়লে বিতর্ক তো হবেই। যে দেশে আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদির স্বপ্নপূরণের জন্য ২০২৩ সালের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালানোর চিন্তাভাবনা কতটা বাস্তবোচিত? বলা হচ্ছে, রেলে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা নিশ্চিত করতে নাকি যাত্রীদের থেকে নামমাত্র লেভি বা টোকেন ইউজার ফি নেওয়া হবে। প্রথমে ব্যস্ততম স্টেশনগুলিতে এই চার্জ বসবে। যেখানে করোনার কারণে এখন জীবনজীবিকাটাই পুরোপুরি ছন্দে ফেরেনি সেখানে এমন পরিকল্পনা আদৌ কি সময়োচিত? সবচেয়ে বড় কথা, রেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলার যাত্রীদের কাঁধেই এই বাড়তি বোঝা চাপার আশঙ্কা প্রবল। কারণ ভারতীয় রেলের ব্যস্ততম স্টেশনের তালিকায় প্রথম দুটি স্থানই হল হাওড়া ও শিয়ালদহ।
কাজেকর্মে আগেই স্পষ্ট হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার এই রাজ্যের রেলপ্রকল্পগুলির গলা টিপে মারতে চেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ঘোষিত বহু প্রকল্পেরই এখন হদিশ নেই। বাংলার প্রতি বঞ্চনার তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। সেসব বাদ দিলেও এই মুহূর্তে করোনার ধাক্কা সামলাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঘুরপথে কৌশলে উন্নত পরিষেবা আর আধুনিকীকরণে যুক্তি খাড়া করে লেভির নামে রেল ভাড়া বাড়ানোর প্রচেষ্টা সময়োচিত তো নয়ই, বরং তা আমজনতার কাছে বাড়তি বোঝা হয়েই দাঁড়াবে। মানবিক দিক থেকে বিষয়টি তাই ভেবে দেখা দরকার।