গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
প্রাচীন বঙ্গদেশীয় বণিকদের প্রসিদ্ধি ইতিহাসের পাতায় পাতায়। তবু, বাঙালি আজও গাল খাচ্ছে তার ব্যবসা বুদ্ধি নেই বলে। যদিও বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্য খুব কম হয়নি। ব্রিটিশ ভারতের অর্থনীতি বহুলাংশে কলকাতা কেন্দ্রিকই ছিল। উপমহাদেশের বহু শিল্প-ব্যবসার সূচনা হয়েছিল কলকাতাতেই। বাংলাই ছিল বহু শিল্পের আঁতুড়ঘর। তারাই পরোক্ষে স্বাধীনতা এবং স্বদেশি আন্দোলনে গতি সঞ্চার করেছিল। কিন্তু গত শতকের ষাটের দশকের ‘ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ রাজনীতির কারণে স্বাধীন ভারতের খণ্ডিত বাংলা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। মার্কসবাদী কমিউনিস্টরা সাতাত্তরে পশ্চিমবঙ্গের শাসক হয়ে আসার পর ধ্বংসাত্মক শ্রমিক আন্দোলন অন্যায় প্রশ্রয় পেয়েছিল। তার ফলে একে একে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বহু শিল্প-ব্যবসা। ব্যবসা করতে না-পারার কটাক্ষটা আরও বেশি হজম করতে হচ্ছিল বাঙালিকে।
সেই হতাশা কাটিয়ে ওঠাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১-তে বাংলার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম যে প্রশংসনীয় কাজটি তিনি করেছেন তা হল—ধর্মঘট এবং কাজের দিনে রাস্তাজুড়ে অনাবশ্যক মিটিং-মিছিল রুখে দিয়েছেন। তাতে শ্রমদিবস/কর্মদিবস নষ্টের অভিশাপে কুঠারাঘাত হয়েছে। কলকাতা-সহ শহরগুলিতে ট্রাফিক অনেক গতিশীল হয়েছে। নিয়ন্ত্রণে এসেছে সব ধরনের ক্রাইম। মানুষ অনেক বেশি স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছে। গরিবের হাতে অর্থের জোগান বাড়ানোর নানা রকম কর্মসূচি বহাল রয়েছে। একদিকে চলছে পূর্ত কাজগুলি, অন্যদিকে চালু রয়েছে সামাজিক সুরক্ষার একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্প। প্রতি বছর এগুলির বহর বাড়ানো হচ্ছে। সাফল্যের সঙ্গে চলছে স্বনিয়ুক্তিরও একাধিক প্রকল্প। রাজ্য সরকারের এই নীতি নীরবে ফিসকাল স্টিমুলাসের কাজ করছে। নরেন্দ্র মোদি এবং নির্মলা সীতারামনকে দিয়ে যে কাজটি করাতে ব্যর্থ হয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এইভাবে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, পুঁজি আকর্ষণের জন্য সক্রিয় রয়েছে ‘সিঙ্গল উইন্ডো’ ব্যবস্থা। কেন্দ্রের ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ মাপকাঠিতে বাংলা সামনের সারিতে উঠে এসেছে। বিজেপির মতো বিরোধী মতের সরকারও বাংলাকে স্বীকৃতি না দিয়ে পারেনি। ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ রচনায় পূর্ব ভারতের শীর্ষ রাজ্যের শিরোপা পেয়েছে আমাদের রাজ্য। সামগ্রিকভাবে দেশের মধ্যে নবম স্থান। এখানে উল্লেখ করার মতো ঘটনা—গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের মতো দুই শিল্পোন্নত রাজ্যকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাকে এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। আরও প্রত্যাশা রাখতে হবে—প্রতি বছর একটু একটু করে এগিয়ে বাংলাই একদিন ভারত সেরা হবে। শুধু সংস্কৃতিতে নয়, শিল্প-বাণিজ্যেও আগামী দিনে ফের চালকের আসনে বসবে পশ্চিমবঙ্গ।