পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এই কাহিনীর শেষ ছিল না। বাম জমানা যত শেষের দিকে গড়িয়েছে, তত বেড়েছে সরকারি প্রকল্প অসম্পূর্ণতার বহর। একটি করে ভোট এগিয়ে আসত আর মন্ত্রীরা গুণমুগ্ধদের নিয়ে জড়ো হতেন গ্রামে গ্রামে, শহরে শহরে। যেসব অঞ্চলে ভোটারদের বেশি বেচাল মনে হতো, সেইসব জায়গায় বেশি করে স্বপ্ন ফেরি করে আসতেন তাঁরা। খুব সহজ রাস্তা—একটি করে শিল পুঁতে দাও। এজন্য দরকার একটি মঞ্চ আর ভাড়ায় পাওয়া কিছু হাততালি। এইভাবে বাম জমানায় বাংলাজুড়ে এত শিলান্যাস হয়েছিল যে তার নির্ভেজাল খতিয়ান কারও জানা ছিল না। কারণ, খোঁজ নিয়ে দেখা যেত বেশিরভাগ শিলান্যাসের পিছনে অর্থ দপ্তরের কোনও সায় ছিল না। অর্থ দপ্তর জানতেই পারত না, মন্ত্রীরা, নেতারা মানুষকে কোথায় কী মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে আসছেন! কিছু নেতা-মন্ত্রীকে ওসব করতে হয়েছিল সাময়িক উতরে যাওয়ার মতলবে। ভোট-বৈতরণী পেরনোর সহজতম রাস্তার নাম ছিল শিলান্যাস। রাজ্যের বহু আগাছার জঙ্গলে তল্লাশি চালালে এখনও যে শ’য়ে শ’য়ে এমন অলঙ্কৃত-শিলার সন্ধান পাওয়া যাবে তাতে সন্দেহ কী! সোজা কথায়, বাম জমানা তার আয়ুর রেকর্ড নিয়ে যত মত্ত হয়ে উঠেছিল, তত কমেছিল কাজকর্মে নিষ্ঠা, সততা। বেড়ে গিয়েছিল ধাপ্পাবাজির নয়া নয়া কৌশল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার প্রতিবাদে। স্বভাবতই তিনি ওই বর্জ্যের উত্তরাধিকার বহন করে নিয়ে যাতি রাজি হননি। সবসময় চেষ্টা করেছেন কাজের নতুন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য গড়ে তুলতে। বেশি কথা নয়। নিজের সীমাবদ্ধতা জানেন। ওজন বোঝেন। এও বোঝেন, তাঁর সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অংশ বটে, কিন্তু কেন্দ্র তাতে বিশেষ আস্থা রাখে না। তারা সঙ্কীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে চায় না। পারবেও না। অতএব কেন্দ্রের ভরসায় তিনি কোনও প্রকল্প হাতে নেন না। নিয়মমাফিক কেন্দ্রের কাছে যতটা দাবি জানাবার জানান। কেন্দ্র সেভাবে সাড়া না দিলে তিনি নিজের কব্জির জোরে প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং রূপায়ণে যত্নবান হন। তাঁর সরকারের যুগান্তকারী একটি প্রকল্পের নাম ‘কন্যাশ্রী’। এই একটি প্রকল্পের সফল রূপায়ণ করে বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে সামান্য রাজ্য সরকারও কৃতিত্বে ভারত সরকারকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। কন্যাশ্রীকে অনুসরণ করে এগিয়ে গিয়েছে আরও অনেক প্রকল্প। যার সুফল বাংলার কোটি কোটি মানুষ পাচ্ছেন। কথা দিয়ে কথা রাখাকে অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে আর কী হয়, তার সর্বশেষ নজির দেখছে বাংলা—পঞ্চায়েতের কাজে উচ্ছ্বসিত বিশ্ব ব্যাঙ্ক। গ্রামীণ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন এবং পঞ্চায়েত অফিসের পরিকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার। সেই কাজ শুধু হয়নি, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অধিক সুসম্পন্ন করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক স্বশক্তিকরণ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মসূচির এই সাফল্যের সুফল পাবেন গ্রামের প্রতিটি মানুষ। সাফল্যের এই ধারা শুধু ধরে রাখলে চলবে না, উন্নয়নের বাকি ক্ষেত্রগুলিকেও এর দ্বারা অনুপ্রাণিত করতে হবে।