বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
তবে যে কোনও মৃত্যুই বেদনাদায়ক। যদি তা শিশু, কিশোর বা তরতাজা যুবকের হয় তাহলে সেই মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দেয় অনেক বেশি। অসহায় এই মায়ের কান্না নাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যবাসীকে। মানবদরদি মুখ্যমন্ত্রী স্থির থাকতে পারেননি। তাই এতটুকু দেরি না করেই সন্তানহারা পরিবারের নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিও হবে। কিন্তু এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা যে বিষয়টাকে ফের সামনে আনল তা হল রোগী ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ রেফার করার পুরনো ব্যাধি। করোনা সঙ্কটের দিনেও এই বদঅভ্যাস থেকে মুক্ত থাকতে পারছে না কিছু হাসপাতাল নার্সিংহোম। এক শ্রেণীর চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যখন রাজ্যের বহু রোগী রোগমুক্ত হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন তখন এক কলসি দুধে এক ফোঁটা চোনার মতোই মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অসহযোগিতা অমানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নিষ্ক্রিয় থাকেনি মমতা প্রশাসন। তাই রাজ্যে যাতে আর একটিও শুভ্রজিতের মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনা না ঘটে সে জন্যই কড়া অবস্থান নিয়েছে সরকার। করোনা সঙ্কটের দিনে রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে সরকার যে বদ্ধপরিকর তা তাদের উদ্যোগেই স্পষ্ট।
একের পর এক শক্ত প্রতিবন্ধকতা পেরতে হচ্ছে রাজ্যকে। বেসরকারি কিছু হাসপাতালে লাগাম ছাড়া চিকিৎসা বিল ও পিপিই বাবদ গলা কাটা বিল, আটকাতে নরমনীতি বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া অবস্থান আগেই নিয়েছেন। এবার রোগী বা রোগীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও রেফারের ঘটনা বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা—রোগীকে স্থিতিশীল না করে রেফার করলেই হবে কঠোর শাস্তি। বাতিল হতে পারে লাইসেন্স। চিকিৎসায় গাফিলতি যে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না তা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে স্পষ্ট করছে সরকার। বলেছে চিকিৎসার অভাবে কারও মৃত্যু হলে শোকজ, সাসপেন্ড এমনকী ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আইন প্রয়োগ করে অভিযুক্ত হাসপাতাল নার্সিংহোমের লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল করা হতে পারে। নিঃসন্দেহে এটা সময়োচিত সঠিক পদক্ষেপ। এরজন্য পূর্ণাঙ্গ একটি গাইড লাইন তৈরি করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার দীর্ঘদিনের ব্যাধি একদিনে সেরে যাবে তা ভাবাটাও কষ্টকর। কিন্তু এই রোগের দাওয়াই দিতে সরকারি তরফে চেষ্টার যে বিন্দুমাত্র ত্রুটি নেই তা প্রমাণিত। তাই বেগতিক বুঝেই হয়তো অভিযুক্ত কেউ কেউ মুখে কুলুপ এঁটেছে।
আসলে পালাবদলের পর ক্ষমতায় এসেই রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম জমানায় ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকেও নজর দেওয়া হয়। কখনও বা মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ছুটে
গেছেন হাসপাতাল পরিদর্শনে। ভেঙে দিয়েছেন হাসপাতাল চত্বরে
গড়ে ওঠা বেশ কিছু দালালচক্র। তাঁর আমলেই রাজ্যে গড়ে উঠেছে একের পর এক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। কোভিড চিকিৎসার জন্য রাজ্যে হাসপাতালের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যরকম বৃদ্ধি পেয়েছে। নিন্দুকেরাও স্বীকার করবেন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির হাল ফিরেছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল চত্বর। সাধারণ মানুষের মধ্যে হাসপাতালে যাওয়ার ভীতি এখন অনেকটাই কমেছে। বিনা খরচে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন রাজ্যের অসংখ্য মানুষ। হয়েছে ন্যায্যমূল্যে ওষুধের দোকান। তবু কোথাও কোথাও ঘুঘুর বাসা এখনও রয়েছে। তা ভাঙতেই এবার তৎপর নবান্ন।
যে বয়সে স্পর্ধা দেখানোর কথা সে বয়সে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ল শুভ্রজিৎ। অভিযোগ যথাসময়ে চিকিৎসার অভাবের। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয়টিকে ভালোভাবে মেনে নেননি তা স্বাস্থ্যদপ্তরের নড়াচড়াতেই ধরা পড়েছে। তাই মানুষের ভোগান্তি আটকাতে তাঁর এই কড়া অবস্থান অবশ্যই ভরসা জোগাচ্ছে। চিকিৎসা না করে রোগী ফেরানোর কেসে শাস্তি প্রদানের কঠোর হুঁশিয়ারি বিপদগ্রস্তের পাশে থাকারই ইঙ্গিত। তা মানবিকতারই নজির।