কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
দাঁড়াতে শুরু করেছে। যে দেশের সরকারের নীতি আর লকডাউনের ধাক্কায় অর্থনীতির কোমর কার্যত ভেঙে পড়েছে, সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন নাটকীয় দাবির কথা শুনে চোখ কপালে উঠেছে আম-আদমির। এবছর শেষ হতে আরও পাঁচ মাস বাকি। অনেকে মনে করছেন, এটা বছরের সেরা রসিকতা হতে পারে। ভাঙা কোমর নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর দিবাস্বপ্ন দেখা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মহামারীর মধ্যেও ভারতীয় অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ ইতিমধ্যেই নজরে এসেছে। কী সেই লক্ষণ তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ইতিবাচক। আর্থিক সংস্কার থেকে করোনা যুদ্ধ—সবকিছুই বক্তব্যে স্থান পেলেও আসল সমস্যাগুলিকে তিনি আড়ালে রাখলেন, কর্মসংস্থানের প্রশ্নে, জীবন-জীবিকার প্রশ্নে ভারতে যে ভয়াবহ সঙ্কট চলছে তা থেকে উত্তরণের কোনও দিশা দেখাননি। ব্যাখ্যা করলেন আত্মনির্ভর ভারতের অর্থ। যখন দেশের একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তখন তিনি বিদেশিলগ্নি টানতে লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখার কথা বলছেন। ভারতের বহু মানুষ এখন কাজ হারিয়ে দিশাহারা। কারো বা বেতনের টাকা কমে গিয়েছে। লগ্নি টানার মতো বাস্তব পরিস্থিতি দেশে এখন আছে কিনা তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। পুরোটাই ধোঁয়াশা। আসলে কথার জাদুতে মোহিত করাটাই তাঁর দীর্ঘদিনের অভ্যাস। অনেকগুলি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তাঁর বক্তব্যের পর বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে এবং তারপর সেই বিভ্রান্তি কাটাতে তিনি আসরে নেমে পড়ছেন। তাই আত্মনির্ভর ভারতের কথা বোঝাতেই প্রধানমন্ত্রীকে অনেকগুলি শব্দ ব্যয় করতে হল। দেশে যখন করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে, মানুষের হাতে নগদ না থাকায় কেনার চাহিদা কমেছে, বহু কলকারখানা বন্ধ, রাজকোষে ঘাটতি, শিল্পসূচক তলানিতে, জিডিপির হার কমছে, তখন সেই ভাঙা কোমর নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখালেন। এই ভয়াবহ সঙ্কটে থাকা দেশে কোন জাদুতে তিনি অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ খুঁজে পেলেন তা স্পষ্ট করে দেওয়ার দরকার ছিল। সত্যিই কি দেশে বিনিয়োগের পথ মসৃণ হয়েছে? প্রশ্ন উঠবেই।
আসলে নিত্যনতুন স্লোগানের মাধ্যমে ভোকাল টনিক দিতেই বেশি পছন্দ দেশের শাসকের। কাজের চেয়ে বাগাড়ম্বর বেশি। কথায় ও কাজে অমিল প্রতি পদে পদে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর তা ভাঙার রেকর্ড গড়েছে এই সরকার। আর রয়েছে রাজ্যকে বঞ্চনা করার দীর্ঘ ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরার লক্ষণ খুঁজছেন তখন তাঁরই অর্থমন্ত্রী বাংলাকে বঞ্চিত রেখে প্রচারের ঢক্কানিনাদ বাজালেন। জিএসটি ঘাটতির ক্ষতিপূরণ বাবদ গত অর্থ বছরের ন্যায্য প্রাপ্য ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়া থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করে মাত্র ৪১৭ কোটি টাকা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলেন। দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে হলে রাজ্যগুলির অর্থনীতির ভিতও যে মজবুত করা জরুরি তা তাঁরা ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেন না। করোনা লড়াইয়ে রাজ্যের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল কেন্দ্রের। দরকার ছিল সহযোগিতার। বারবার দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাধ্যবাধকতাটুকুও তারা মানছে না। গত বাজেটের পূর্ব নির্ধারিত অর্থ বরাদ্দ করেই বাজার গরম করছে।
দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখাতেই বেশি পছন্দ করেন। কখনও আচ্ছে দিনের স্বপ্ন, কখনও ডিজিটাল ইন্ডিয়ার, কখনও বা আত্মনির্ভর ভারত গড়ার স্বপ্ন। এখন অর্থনীতির ভাঙা কোমর নিয়ে বাস্তবকে আড়ালে
রেখে বিদেশি ও স্বদেশি লগ্নিতে লাল কার্পেট বিছিয়ে দেওয়ার কথা
বলে বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তাঁর এই ইতিবাচক বার্তা বাস্তবে
সত্য হবে তো?