কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
রাজতন্ত্রের ইতিহাস সুপ্রাচীন। সেখানে রাজার ইচ্ছাই সব। তিনি যত দক্ষ এবং সুবিচেক হোন না কেন, এর অন্যথা হওয়ার নয়। রাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিপদ হল—রাজা কর্ণেন পশ্যতি! মানে, রাজা কানে দেখেন! তা তাঁর দৃষ্টিশক্তি যত প্রখরই হোক। রাজতন্ত্রের এরকম অনেক ত্রুটি দেখে মানুষ বিকল্প সন্ধান করেছে। মুক্তিকামী সংঘবদ্ধ মানুষের দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের ভিতর দিয়ে এসেছে গণতন্ত্র, বহু দলীয় গণতন্ত্র, সাম্যবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি প্রভৃতি। ভারতের মতো সুবৃহৎ দেশগুলি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে সমগ্র দেশের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব স্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যগুলিকেও দেওয়া হয়েছে সীমিত কর্তৃত্বের অধিকার। সংশ্লিষ্ট নির্বাচিত রাজ্য সরকারের মাধ্যমে মানুষ সেই অধিকার ও ক্ষমতা ভোগ করে। সেই অর্থে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির সমন্বয়ের নীতিই হল ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূল শক্তি। অবাঞ্ছিত হলেও সত্যি যে, কেন্দ্রীয় শাসকরা সবসময় নিরপেক্ষতার নীতি নিয়ে চলেন না। নিজ দল বা জোটের সরকার যেসব রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত নয়, সেগুলির প্রতি বঞ্চনা এক ‘ঐতিহ্য’-এ পরিণত হয়েছে। এমনকী, পুরো দেশটাকে তাঁবে আনার কৌশল হিসেবে কেন্দ্রীয় শাসকরা এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, যা আদৌ ভালো নয়। অগণতান্ত্রিক তো বটেই, কখনও কখনও পীড়নমূলক। এই প্রসঙ্গে ইন্দিরা শাহির কুখ্যাত ‘জরুরি অবস্থা’র কথা উল্লেখ করা যায়।
প্রায় একইরকম বিতর্কে জড়িয়েছে মোদি জমানার একাধিক সিদ্ধান্ত। যেমন নোট বাতিল, জিএসটি, এনআরসি, নাগরিকত্ব আইন প্রভৃতি। মোদি সরকারের হাতে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিও সুরক্ষিত নয় বলে অভিযোগের তর্জনী উঠেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কের এতটা অবনতি অতীতে কমই হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, রাষ্ট্রের ভুল ও ব্যর্থতা চরমসীমা অতিক্রম করলে প্রথম প্রতিবাদটি ধ্বনিত হয় ছাত্রসমাজের মধ্যে থেকে। কারণ, সমাজের শিক্ষিত অংশের মধ্যে ছাত্ররাই তরুণ। জোরালো প্রতিবাদের সাহস তরুণদের চেয়ে কার বেশি? এতেই কি প্রমাদ গুনছেন মোদিজি? তা না হলে সিবিএসই-র একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সিলেবাস থেকে উপরোক্ত স্পর্শকাতর বিষয়গুলিকেই বাদ দেওয়া হল কেন? যে-কোনও নিরপেক্ষ মানুষ ভাববেন, সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর বিষয়গুলিই বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সিলেবাস সংক্ষেপ করার অন্য উপায় কি ছিল না? সরকারের বোঝা উচিত, এইভাবে স্বস্তিতে থাকা যায় না। কয়েকটি বিতর্কিত বিষয় আড়াল করতে পারলেই কি ছাত্রসমাজ তাদের পক্ষে চলে যাবে! প্রতিবাদ জরুরি মনে করলে মানুষকে ঠেকানো যাবে না। সবশেষে ভোটের বোতাম তো একদিন হাতের নাগালে আসবেই। ছাত্রসমাজের হাতে ভোটের শেয়ার কিন্তু বিরাট।