কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
লকডাউনের সময়কালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একের পর এক সাফল্যের কথা জানিয়ে দিচ্ছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকার। এটা নবান্নের দাবি নয়, কেন্দ্রেরই রিপোর্ট। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেশের অনেক রাজ্য এবং কেন্দ্রকে পিছনে ফেলেছে বাংলার সরকার। আবার জাতীয় গড়ের চেয়েও এই রাজ্যে বেকারত্বের হার কমেছে নজরকাড়া সংখ্যায়। এটা মুদ্রার এক পিঠ। অন্য পিঠে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে আরও একবার দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করল পশ্চিমবঙ্গ। এই নিয়ে টানা পাঁচবার। অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে রাজ্যের এই সাফল্য অবশ্যই শিক্ষণীয়।
এই সাফল্যের পিছনে রাজ্যের সাধারণ মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত মানুষের ভূমিকা কম নয়। অনেক ঝড়ঝাপটাতেও তাঁদের ভরসার জায়গাটার পরিবর্তন হয়নি। দফায় দফায় স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমিয়ে কেন্দ্র সাধারণ মানুষকে বিশেষত অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিকদের বিপাকে ফেলেছে। তবু এখনও সঞ্চয়ের জন্য তাঁরা সেই সরকারি প্রকল্পের উপরই আস্থাশীল। যাঁর নিট ফল হল মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা গ্রাহককে ফিরিয়ে দেওয়ার পর কেন্দ্রের ঘরে জমা পড়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৬৮ হাজার ২২৫ কোটি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, গত অর্থবর্ষে সারা দেশে স্বল্প সঞ্চয় বাবদ আদায় হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৪৭ টাকা। এর মধ্যে শুধু বাংলা থেকেই এসেছে প্রায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। বোঝাই যাচ্ছে, যাঁদের মূলত সুদের টাকায় সংসার চলে তাঁরা তেমন বাজারগত ঝুঁকি নিতে চান না। সঞ্চিত টাকা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় মান্থলি ইনকাম স্কিম, সিনিয়র সিটিজেন স্কিম, সুকন্যা সমৃদ্ধি, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো নানা প্রকল্পে টাকা রেখে নিশ্চিন্ত বোধ করেন। এক সময়ে দেশের নানা প্রান্তে চিটফান্ডের রমরমা ব্যবসা এবং বেশি আয়ের আশায় সেখানে টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হওয়ার দগদগে স্মৃতি এখনও ম্লান হয়নি। কেন্দ্রীয় রিপোর্টই স্পষ্ট করেছে অন্যত্র টাকা রাখার বদলে সরকারি নানা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখতেই মানুষ বেশি পছন্দ করছেন। অথচ তাঁদের সেই ইচ্ছার জায়গাটাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি স্কিমগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার কোনওরকম সদিচ্ছা কেন্দ্রের তরফে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন? দেখা যাচ্ছে, দফায় দফায় স্বল্পসঞ্চয়ে সুদের হার কমিয়ে কেন্দ্র সাধারণ মানুষের উদ্বেগই বাড়াচ্ছে।
স্বল্প সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে যে দুটি বিষয়ে কেন্দ্রের বেশি করে নজর দেওয়া জরুরি ছিল তার একটি হল পরিষেবা, অন্যটি সুদের হার। দুটি ক্ষেত্রেই তারা ডাহা ফেল। পরিকল্পনার অভাবও প্রকট। বহু ডাকঘরেই পরিষেবার মান তলানিতে। সেখানে অদক্ষ কিছু কর্মীকে দিয়ে কোনওরকমে কাজ উতরে দেওয়ার মানসিকতায় হয়রানির একশেষ হতে হয় নাগরিকদের। লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা কমবেশি অনেকেরই আছে। অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের স্বার্থরক্ষায় কেন্দ্রের এতটুকু মাথাব্যথা নেই। অর্থনীতির বেহাল দশা ঢাকতে শিল্পের গতি বাড়াতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বারবারই ঋণের উপর সুদের কমিয়েছে, কমেছে রেপো রেট। তার সঙ্গে তাল রাখতে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য ব্যাঙ্কের যুক্তিকে মান্যতা দিয়ে এমন সব সিদ্ধান্ত সরকার নিচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষের জমানো টাকার সুদের উপরই কোপ বেশি পড়ছে। স্বল্প সঞ্চয়ে উৎসাহ বৃদ্ধির বদলে সেখানে সুদের হার কমিয়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, হয়রানি আটকানোর ব্যবস্থা না করে ডাকঘরের এজেন্টদেরও কমিশনের টাকা কমিয়ে দিয়ে তাঁদের বিপাকে ফেলেছে কেন্দ্র। অথচ ওই কাজের সঙ্গে হাজার হাজার বেকারের রুটিরুজির বিষয়টি জড়িত। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিতে ব্যর্থ সরকার এভাবেই বেকারদের আয়ের সুযোগ সঙ্কুচিত করছে। অন্যদিকে আর্থিক বঞ্চনা আর রাজ্যকে কোণঠাসা করার কেন্দ্রীয় নীতি অব্যাহত থাকলেও বাংলা যে ব্যতিক্রম তার প্রমাণও বারবারই পাওয়া যাচ্ছে। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে রাজ্যের ঘরে টাকা আসার সুযোগ না থাকলেও ব্যাঙ্ক ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয়ে দেশের সেরা হয়ে বাংলা ফের প্রমাণ করল শত বঞ্চনাতেও অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি এখানে অপ্রতিরোধ্য। বাংলাই গড়েছে পর পর পাঁচ বারের সেরা হওয়ার উজ্জ্বল রেকর্ড।